আত্মনিয়ন্ত্রণ করার উপায় - আত্মনিয়ন্ত্রণ করার কৌশল

প্রিয় পাঠক আপনি কি আপনার আত্মনিয়ন্ত্রণ করার উপায় খোঁজছেন বা আপনার আত্ম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কিছু কৌশল জানার চেষ্টা করছেন তাহলে আজকের এই সম্পূর্ণ পোস্টটি আপনার জন্যই লেখা হয়েছে।

self control

আত্ম-নিয়ন্ত্রণ বলতে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা বিশেষ করে নিজের আবেগ, অনুভূতি, রাগ অথবা অনাকাংখিত ব্যবহার নিয়ন্ত্রন করাকে বোঝায়। আপনার চারপাশে অনেক কিছুই ঘটে যা আপনার মধ্যে রাগ-হতাশা জন্মানোর কারন হতে পারে এবং এর ফলস্বরূপ আপনি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারেন। নিজের রাগ, হতাশা, চাপ, আবেগ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কিছু পরামর্শ নিম্নে উল্লেখ করা হল 

পোস্ট সূচিপএঃ আত্মনিয়ন্ত্রণ করার উপায় এবং আত্মনিয়ন্ত্রণ করার কৌশল

নিজের ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল

• আপনার ক্ষমতার উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। এটা হয়তো আপনার আর্থ- সামাজিক অবস্থান, শারীরিক সামর্থ্য, লিঙ্গভেদ ইত্যাদি কারণে হতে পারে।

• অন্যের মৌলিক অধিকারকে সম্মান করুন। এমন ভাবনা আপনাকে পরিস্থিতির অপর দিকটা সম্পর্কে ভাবতে শেখাবে।

• কিছু ক্ষেত্রে নারী-পূরুষের মধ্যকার ক্ষমতার সম্পর্কটা জটিল হয়। এক্ষেত্রে কামনা-বাসনা, অহমিকা ও ভুল ধারণা কাজ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে যোগাযোগ করা বা মনের কথা প্রকাশ করাটা খুব প্রয়োজন।

• চারপাশের মানুষের সাথে নিজের অনুভূতির কথা শান্তিপূর্ণভাবে বুঝিয়ে দিন এবং একিভাবে তাদের অনুভূতিও বোঝার চেষ্টা করুন

নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল

• নিজের রাগের উপসর্গগুলো যেমন; তীব্র শ্বাস-প্রশ্বাস, দ্রুত হৃদ-স্পন্দন হওয়া ইত্যাদি চিহ্নিত করার চেষ্টা করুন।

• আপনার এ অবস্থার কথা কোন বিশ্বস্ত বন্ধুকে বা অন্য কোন প্রাপ্ত-বয়স্ক কারও কাছে প্রকাশ করুন।

• নিজের সাথে ইতিবাচকভাবে কথা বলার অনুশীলন করুন, যেমন; শান্ত হও', 'নিজেকে নিয়ন্ত্রন কর', 'আমি পারব' ইত্যাদি।

• নিজের কল্পনায় একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশের কথা ভাবুন যেমন; আপনি একটি সুন্দর ফুলের বাগানের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন।

• নিশ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় ধরে শ্বাস ছাড়ুন এবং প্রশান্তি অনুভব করার চেষ্টা করুন।

• কোন কথা বলার আগে এক থেকে দশ গোনার চেষ্টা করুন। এটা আপনার রাগ দমনে সরাসরি প্রভাব না ফেললেও রাগের কারণে যে ক্ষতিটা হয় সেটাকে কিছুটা হলেও কমাতে ভূমিকা রাখবে।

• শারীরিক অনুশীলন ও বিশ্রাম আপনার ভেতরে থাকা চাপ উপশমে সহায়তা করে।

নিজের হতাশা নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল

• যদি আপনি আপনার নিয়মিত জীবনে হতাশ হন তবে সব কিছু থেকে সাময়িক বিরতি নিয়ে বিশ্রাম নিন অথবা কোথাও বেরিয়ে আসুন।

• ইতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে ভাবার চেষ্টা করুন। যে কোন প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করা প্রথম দিকে কঠিন হলেও পরে তা আর এত কঠিন থাকে না। বিশ্বাস করতে শিখুন যে আপনার জন্য ভাল কিছু অপেক্ষা করছে।

• আপনি যা অর্জন করতে পারেনি সেটা নিয়ে না ভেবে বরং আপনার জীবনের অর্জনগুলো নিয়ে ভাবুন।

• জীবনের লক্ষ্য স্থীর করুন এবং লক্ষ্যে পৌছতে আপনার যা যা করা প্রয়োজন সে কাজগুলোর প্রতি মননিবেশ করুন।

• চিন্তা-চেতনায় স্বীরতা আনার জন্য কোন সৃষ্টিশীল কাজে নিজেকে নিয়োজিত করুন যেমন; প্রেরণাদায়ক কোন গল্প পড়ুন অথবা কোন চলচ্চিত্র দেখুন।

নিজের চাপ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল

• আপনার চাপের উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন, এক্ষেত্রে নিশ্চিত না হলে অনুমানের ওপর নির্ভর করুন।

• শারীরিক বিশ্রামের দিকে মনোযোগ দিন এবং আপনার শরীরের যত্ন নিন। কখনও কখনও ঘুমের অভাব চাপের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ।

• যদি পরিবার, বন্ধু-বান্ধব বা আশেপাশের কোনও চাপের কারণে আপনি চাপ অনুভব করে থাকেন তাহলে তাদের সাথে এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলুন।

• আপনার চাপ গ্রহন করার সীমারেখা বোঝার চেষ্টা করুন এবং একিসাথে চেষ্টা করুন বেশি চাপ না নিতে।

• নিজের কষ্ট মনের ভেতরে চেপে রাখলে সেটা আরও বৃদ্ধি পায়। আপনার বন্ধু এবং অভিভাবকদের সঙ্গে আপনার মনের কষ্টের কথা খুলে বলুন। এ ব্যাপারে তারা আপনাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারে।

• যতটা সম্ভব হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করুন। বন্ধু-বান্ধবের সাথে কৌতুকপূর্ণ গল্প ও কাহীনি নিয়ে আলোচনা করুন। হাসি-আনন্দ আপনার মনের চাপ কমাতে সাহায্য করবে।

নিজের সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল

• বিশ্বাস একটি ভালো সম্পর্কের মূল ভিত্তি। পরিবার, বন্ধু ও সহকর্মীদের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করলে আপনি তাদের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়তে পারবেন।

• আপনি যখন যার সাথে কাজ করবেন তাকে সম্মান করুন, তাদের মতামত ও ধারণার মূল্য দিন। তাদেরকে ভাবতে দিন যে তারা আপনার কাছে মূল্যবান। অন্যের সাথে তেমন ব্যবহার করুন যেমনটা আপনি নিজের সাথে অন্যের কাছে আশা করে থাকেন।

• সহানুভূতিশীল হতে চেষ্টা করুন। অন্যের জন্য জীবনটা কেমন সেটা ভাবতে শিখুন। 

• নিজের মনের নেতিবাচক আবেগ প্রকাশের ক্ষেত্রে সচেতন থাকুন। এর প্রভাব যেন আপনার চারপাশের মানুষের ওপর না পরে সেটা নিয়ে সতর্ক থাকুন।

• অন্যদের মতামতকে স্বাগত জানান। বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যের ভিন্ন মতামত ও ধারণা সময় নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বিবেচনা করুন।

• চারপাশের মানুষের প্রতি ইতিবাচন মনোভাব রাখুন। অন্যরা আপনার জন্য যা করে তার জন্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করুন।

নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল

• আপনার আবেগ সম্পর্কে সচেতন থাকুন। নেতিবাচক আবেগ দ্বারা পীড়িত বা আক্রান্ত হওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য তা উপেক্ষা করুন, অস্বীকার করুন বা কোন কিছুই হয়নি এমনটা ভাবতে শিখুন।

• একটি পরিস্থিতি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবুন এবং এটির সমাধান করার উপায় খুঁজে বের করুন। এ ব্যাপারে বন্ধু বা পরিবারের সাহায্য নিন।

• বিশ্রাম নিন, খোলা হাওয়ায় বেড়াতে যান। প্রকৃতির কাছাকছি সময় কাটানো নেতিবাচক আবেগ প্রশমনের একটি ভালো উপায়।

• জীবনের প্রতিটা ঘটনা যা খারাপ কিংবা ভালো তা একটা অর্থবহ উদ্দেশ্য পরিবেশন করে। সুতরাং জীবন নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে ভাবতে শিখুন।

• অন্যদের সাথে আপনার অনুভূতি ও চিন্তার কথা প্রকাশ করুন। এতে আপনি সমস্যাগুলোকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভেবে দেখার সুযোগ পাবেন যা হয়তো সমাধান পথ খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।

শেষ কথা-আত্মনিয়ন্ত্রণ 

সিদ্ধান্ত গ্রহণ হল অনেকগুলো বিকল্প পন্থার মধ্যে একটি সঠিক পন্থা নির্বাচন করার প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় একটি একটি করে বিকল্প পন্থা বাতিল করতে হয়, প্রত্যেকটি পন্থার ফলাফল নিয়ে ভাবতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত একটি পন্থা বেছে নিতে হয়। জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া একটি চূড়ান্ত পছন্দকে আপনাররে। 

আপনার কাছে যদি মনে হয়ে থাকে আমরা আমাদের এই পোষ্টের মধ্যে আপনার প্রয়োজনে সমস্ত তথ্যগুলো উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি তাহলে অবশ্যই আমাদের এই পোষ্টের নিচে একটি মন্তব্য করে যাবেন কারণ আপনার একটি মন্তব্য আমাদের পোস্ট লেখার আগ্রহ কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে দেয়। এছাড়াও আপনি চাইলে আমাদের এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন কারণ তারাও এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণ করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়ে যাবে। এমনকি আপনি চাইলে আমাদের এই ধরনের পোস্টগুলো যদি করতে চান তাহলে ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে হবে। ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ড্রিম সেন্টার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url