তারাবি নামাজ নিয়ে সহীহ বুখারীর হাদিস
প্রিয় পাঠক আপনি কি রমজান মাসের তারাবির নামাজ নিয়ে বিস্তারিত হাদীস জানতে চাচ্ছেন তাহলে আজকের এই পোস্টটি শুধুমাত্র আপনার জন্যই।
কারণ এই পোস্টটি যদি আপনি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়তে পারেন তাহলে তারাবির
নামাজ নিয়ে সহীহ বুখারীর
যে হাদিসগুলো রয়েছে সেই হাদীসগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়ে যাবেন। এমনকি
তারাবির নামাজের নিয়ম কানুন বা তারাবির নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কেও এই পোস্টের
মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই দেরি না করে চলুন সম্পূর্ণ
আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ি।
পোস্ট সূচীপত্রঃ তারাবি নামাজ নিয়ে সহীহ বুখারীর কয়েকটি হাদিস
- তারাবি সহীহ বুখারী : ২০০৮
- তারাবি সহীহ বুখারী : ২০০৯
- তারাবি সহীহ বুখারী : ২০১০
- তারাবি সহীহ বুখারী : ২০১১
- তারাবি সহীহ বুখারী : ২০১২
- তারাবি সহীহ বুখারী : ২০১৩
- শেষ কথা-তারাবি নামাজ নিয়ে সহীহ বুখারীর হাদিস
তারাবি সহীহ বুখারী : ২০০৮
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، قَالَ أَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لِرَمَضَانَ " مَنْ قَامَهُ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ "
অনুবাদঃ "আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে রমাযান সম্পর্কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি রমাযানে ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের আশায় কিয়ামে রমাযান অর্থাৎ তারাবীহর সালাত আদায় করবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে"।
তারাবি সহীহ বুখারী : ২০০৯
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ " قَالَ ابْنُ شِهَابٍ فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَالأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ، ثُمَّ كَانَ الأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ فِي خِلاَفَةِ أَبِي بَكْرٍ وَصَدْرًا مِنْ خِلاَفَةِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما
অনুবাদঃ "আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমাযানে ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের আশায় তারাবীহর সালাতে দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। হাদীসের রাবী ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইনতিকাল করেন এবং তারাবীহর ব্যাপারটি এ ভাবেই চালু ছিল। এমনকি আবূ বাকর (রাঃ)-এর খিলাফতকালে ও ‘উমার (রাঃ)-এর খিলাফতের প্রথম ভাগে এরূপই ছিল"।
তারাবি সহীহ বুখারী : ২০১০
وَعَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدٍ الْقَارِيِّ، أَنَّهُ قَالَ خَرَجْتُ مَعَ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ لَيْلَةً فِي رَمَضَانَ، إِلَى الْمَسْجِدِ، فَإِذَا النَّاسُ أَوْزَاعٌ مُتَفَرِّقُونَ يُصَلِّي الرَّجُلُ لِنَفْسِهِ، وَيُصَلِّي الرَّجُلُ فَيُصَلِّي بِصَلاَتِهِ الرَّهْطُ فَقَالَ عُمَرُ إِنِّي أَرَى لَوْ جَمَعْتُ هَؤُلاَءِ عَلَى قَارِئٍ وَاحِدٍ لَكَانَ أَمْثَلَ. ثُمَّ عَزَمَ فَجَمَعَهُمْ عَلَى أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ، ثُمَّ خَرَجْتُ مَعَهُ لَيْلَةً أُخْرَى، وَالنَّاسُ يُصَلُّونَ بِصَلاَةِ قَارِئِهِمْ، قَالَ عُمَرُ نِعْمَ الْبِدْعَةُ هَذِهِ، وَالَّتِي يَنَامُونَ عَنْهَا أَفْضَلُ مِنَ الَّتِي يَقُومُونَ. يُرِيدُ آخِرَ اللَّيْلِ، وَكَانَ النَّاسُ يَقُومُونَ أَوَّلَهُ.
অনুবাদঃ. "আবদুর রাহমান ইবনু ‘আবদ আল-ক্বারী (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রমাযানের এক রাতে ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-এর সাথে মসজিদে নাবাবীতে গিয়ে দেখি যে, লোকেরা এলোমেলোভাবে জামা‘আতে বিভক্ত। কেউ একাকী সালাত আদায় করছে আবার কোন ব্যক্তি সালাত আদায় করছে এবং ইকতেদা করে একদল লোক সালাত আদায় করছে। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আমি মনে করি যে, এই লোকদের যদি আমি একজন ক্বারীর (ইমামের) পিছনে জমা করে দেই, তবে তা উত্তম হবে।
আরো পড়ুনঃ আয়াতুল কুরসি বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থসহ
এরপর তিনি ‘উবাই ইবনু ‘কাব (রাঃ)-এর পিছনে সকলকে জমা করে দিলেন। পরে আর এক রাতে আমি তাঁর [‘উমার (রাঃ)] সাথে বের হই। তখন লোকেরা তাদের ইমামের সাথে সালাত আদায় করছিল। ‘উমার (রাঃ) বললেন, কত না সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা! তোমরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে থাক তা রাতের ঐ অংশ অপেক্ষা উত্তম যে অংশে তোমরা সালাত আদায় কর, এর দ্বারা তিনি শেষ রাত বুঝিয়েছেন, কেননা তখন রাতের প্রথমভাগে লোকেরা সালাত আদায় করত"।
তারাবি সহীহ বুখারী : ২০১১
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، رضى الله عنها زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَلَّى وَذَلِكَ فِي رَمَضَانَ.
অনুবাদঃ "নাবী-সহধর্মিণী ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করেন এবং তা ছিল রমাযানে"।
তারাবি সহীহ বুখারী : ২০১২
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَخْبَرَنِي عُرْوَةُ، أَنَّ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَخْبَرَتْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم خَرَجَ لَيْلَةً مِنْ جَوْفِ اللَّيْلِ، فَصَلَّى فِي الْمَسْجِدِ، وَصَلَّى رِجَالٌ بِصَلاَتِهِ، فَأَصْبَحَ النَّاسُ فَتَحَدَّثُوا، فَاجْتَمَعَ أَكْثَرُ مِنْهُمْ، فَصَلَّوْا مَعَهُ، فَأَصْبَحَ النَّاسُ فَتَحَدَّثُوا، فَكَثُرَ أَهْلُ الْمَسْجِدِ مِنَ اللَّيْلَةِ الثَّالِثَةِ، فَخَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَصَلَّى، فَصَلَّوْا بِصَلاَتِهِ، فَلَمَّا كَانَتِ اللَّيْلَةُ الرَّابِعَةُ عَجَزَ الْمَسْجِدُ عَنْ أَهْلِهِ، حَتَّى خَرَجَ لِصَلاَةِ الصُّبْحِ، فَلَمَّا قَضَى الْفَجْرَ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ، فَتَشَهَّدَ ثُمَّ قَالَ " أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّهُ لَمْ يَخْفَ عَلَىَّ مَكَانُكُمْ، وَلَكِنِّي خَشِيتُ أَنْ تُفْتَرَضَ عَلَيْكُمْ فَتَعْجِزُوا عَنْهَا " فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَالأَمْرُ عَلَى ذَلِكَ
অনুবাদঃ "আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গভীর রাতে বের হয়ে মসজিদে সালাত আদায় করেন, কিছু সংখ্যক পুরুষ তাঁর পিছনে সালাত আদায় করেন। সকালে লোকেরা এ সম্পর্কে আলোচনা করেন, ফলে লোকেরা অধিক সংখ্যায় সমবেত হন। তিনি সালাত আদায় করেন এবং লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করেন। সকালে তাঁরা এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। তৃতীয় রাতে মসজিদে মুসল্লীর সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। এরপর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়ে সালাত আদায় করেন ও লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করেন।
চতুর্থ রাতে মসজিদে মুসল্লীর সংকুলান হল না, কিন্তু তিনি রাতে আর বের না হয়ে ফজরের সালাতে বেরিয়ে আসলেন এবং সালাত শেষে লোকদের দিকে ফিরে প্রথমে তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য দেয়ার পর বললেনঃ শোন! তোমাদের (গতরাতের) অবস্থান আমার অজানা ছিল না, কিন্তু আমি এই সালাত তোমাদের উপর ফরজ হয়ে যাবার আশংকা করছি (বিধায় বের হই নাই)। কেননা তোমরা তা আদায় করায় অপারগ হয়ে পড়তে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ওফাত হলো আর ব্যাপারটি এভাবেই থেকে যায়"।
তারাবি সহীহ বুখারী : ২০১৩
حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، قَالَ حَدَّثَنِي مَالِكٌ، عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّهُ سَأَلَ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ كَيْفَ كَانَتْ صَلاَةُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي رَمَضَانَ فَقَالَتْ مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ، وَلاَ فِي غَيْرِهَا عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً، يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعًا فَلاَ تَسَلْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاَثًا. فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ قَالَ " يَا عَائِشَةُ إِنَّ عَيْنَىَّ تَنَامَانِ وَلاَ يَنَامُ قَلْبِي "
অনুবাদঃ "আবূ সালামাহ ইবনু ‘আবদুর রাহমান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি ‘আয়িশাহ্ (রাযি.)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, রমাযানে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সালাত কিরূপ ছিল? তিনি বললেন, রমাযান মাসে ও রমাযানে ব্যতীত অন্য সময়ে (রাতে) তিনি এগার রাক‘আত হতে বৃদ্ধি করতেন না।[1] তিনি চার রাক‘আত সালাত আদায় করতেন, তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর তিনি চার রাক‘আত পড়েন।
আরো পড়ুনঃ লাইলাতুল কদর সম্পর্কিত সহীহ বুখারীর হাদিস
তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। এরপর তিন রাক‘আত সালাত আদায় করতেন। আমি [‘আয়িশাহ (রাযি.)] বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বিতর আদায়ের আগে ঘুমিয়ে যাবেন? তিনি বললেনঃ হে ‘আয়িশাহ্! আমার দু’চোখ ঘুমায় বটে কিন্তু আমার কালব নিদ্রাভিভূত হয় না"।
শেষ কথা-তারাবি নামাজ নিয়ে সহীহ বুখারীর হাদিস
এতক্ষণ যে পোস্টটি পড়ছিলেন সেই পোস্টটি ছিল তারাবির নামাজ সম্পর্কিত এমনকি এই
পোস্টটির মধ্যে আপনি রমজান মাসের যে তারাবি রয়েছে বা তারাবির নামাজ রয়েছে সেই
তারাবির নামাজ সম্পর্কে কিছু সহীহ বুখারীর হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়ে
গেছেন। এমনকি এই হাদীসগুলো পড়ার মাধ্যমে তারাবির নামাজ পড়ার বিভিন্ন নিয়ম
কানুন সম্পর্কেও জানতে পেরেছেন।
এখন যদি আপনার কাছে মনে হয়ে থাকে আমরা আমাদের এই পোষ্টের মধ্যে আপনার প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্যগুলো উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি তাহলে অবশ্যই আমাদের এই পোস্টের নিচে একটি মন্তব্য করে যাবেন কারণ আপনার একটি মন্তব্য আমাদের পোস্ট লেখার আগ্রহ কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে দেয়। এমনকি আপনি চাইলে আমাদের এই পোস্টটি আপনার ফেসবুক আইডি অথবা মেসেঞ্জারের বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করতে পারেন কারণ এই পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে তারাবি নামাজ নিয়ে সহীহ বুখারীর হাদিস সম্পর্কে জানতে পারবে। এছাড়াও এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট করতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। ধন্যবাদ।
ড্রিম সেন্টার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url