বিশ্বসেরা ১৫ জন বিজ্ঞানী
প্রিয় পাঠক আপনি কি বিশ্বের সেরা ১৫ জন বিজ্ঞানী সম্পর্কে সমস্ত তথ্যগুলো জানতে
চান তাহলে আজকের এই সম্পূর্ণ পোস্টটি আপনার জন্যই।
কারণ আমরা আজকের এই পোষ্টের মধ্যে বিশ্বসেরা ১৫ জন বিজ্ঞানী নিয়ে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি। আপনি যদি আমাদের এই পোস্টটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়তে পারেন তাহলে অবশ্যই বিশ্ব সেরা ১৫ জন বিজ্ঞানী সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়ে যাবেন। এমনকি তারা কিসের জন্য বিশ্ব সেরা এটিও উল্লেখ করা হয়েছে আজকের এই পোষ্টের মধ্যে। তাই দেরি না করে চলুন সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ে নেয়া যাক এবং জেনে নেয়া যাক বিশ্বসেরা ১৫ জন বিজ্ঞান সম্পর্কে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ বিশ্বসেরা ১৫ জন বিজ্ঞানী
- গ্যালিলিও গ্যালিলেই
- আলবার্ট আইনস্টাইন
- আইজাক নিউটন
- নিকোলা টেসলা
- জগদীশ চন্দ্র বসু
- টমাস আলভা এডিসন
- আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল
- মেরি ক্যুরি
- ডাক্তার শাহ এম ফারুক
- অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং
- মাইকেল ফ্যারাডে
- আব্দুস সাত্তার খান
- অধ্যাপক আবুল হুসসাম
- ড. মো. আব্দুল আহাদ
- জাবির ইবনে হাইয়ান
- শেষ কথা-বিশ্বসেরা ১৫ জন বিজ্ঞান
১। গ্যালিলিও গ্যালিলেই
গ্যালিলিও দূরবীক্ষণ যন্ত্রের উন্নয়ন করেছিলেন। আর এই উন্নয়নই জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। নিউটনের গতির প্রথম এবং দ্বিতীয় সূত্র ও কোপারনিকাসের মতবাদ প্রমাণে তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলেছিলেন আধুনিক যুগে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের অগ্রগতির পেছনে গ্যালিলিওর চেয়ে বেশি অবদান আর কেউ রাখতে পারেনি।
২। আলবার্ট আইনস্টাইন
১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন আলবার্ট আইনস্টাইন। তাঁর তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞানে অবদান ও আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া সম্পর্কিত গবেষণা বিখ্যাত। ১৯৩৩ সালে এডলফ হিটলার জার্মানিতে ক্ষমতায় আসলে দেশটিতে ইহুদী বিদ্বেষ বেড়ে যায়। ওই সময় তিনি বার্লিন একাডেমি অব সায়েন্সের অধ্যাপক ছিলেন। ইহুদী হওয়ার কারণে আইনস্টাইন দেশত্যাগ করে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ১৯৯৯ সালে টাইম সাময়িকী আইনস্টাইনকে "শতাব্দীর সেরা ব্যক্তি" হিসেবে ঘোষণা করে।
৩। আইজাক নিউটন
আইজাক নিউটন বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী বিজ্ঞানী। ১৬৮৭ সালে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ফিলসফিয়া ন্যাচারালিস প্রিন্সিপিয়া ম্যাথামেটিকা প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি সর্বজনীন মহাকর্ষ এবং গতির তিনটি সূত্র উলেখ করেছিলেন। এই সূত্র ও মৌল নীতিগুলোই চিরায়ত বলবিজ্ঞানের ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। নিউটনই প্রথম দেখিয়েছিলেন, পৃথিবী এবং মহাবিশ্বের সকল বস্তু একই প্রাকৃতিক নিয়মের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। ২০০৫ সালে রয়েল সোসাইটি বিজ্ঞানের ইতিহাসে প্রভাব বিচারে নির্বাচন আয়োজন করে। ফলাফলে দেখা যায়, নিউটন আইনস্টাইনের চেয়েও অধিক প্রভাবশালী।
৪। নিকোলা টেসলা
নিকোলা টেসলা পাগল বিজ্ঞানী হিসেবে বহুল পরিচিত। তিনি তড়িৎ শক্তি উন্নয়নের জন্য কাজ করেন। ১৮৮৪ সালে তিনি নিউইয়র্কে চলে যান। সেখানে টমাস আলভা এডিসনের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। তার এক্সরে, তড়িৎ বিচ্ছিন্ন চার্জ নিয়ে গবেষণা করেন। টেসলার পেটেন্টের তালিকায় ইলেকট্রিক্যাল কনডেনসার, ট্রান্সফরমার, সার্কিট কন্ট্রোলার, মেথড অব সিগনালিং এবং গতি নির্দেশক যন্ত্র ছাড়াও আরো অনেক কিছু রয়েছে।
৫। জগদীশ চন্দ্র বসু
সবর্প্রথম উদ্ভিদে প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করেছিলেন তিনি হলেন বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক বিজ্ঞানী এবং বাংলার গর্ব আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু। বিভিন্ন উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণার এক পযার্য়ে তার মনে হলো, বিদ্যূত প্রবাহে উদ্ভিদও উত্তেজনা অনুভব করে এবং সাড়া দিতে পারে। সাড়া দেবার মতো ক্ষমতা শুধু প্রানীর আছে এ কথাটি সত্য নয়, উদ্ভিদও সাড়া দিতে পারে। অর্থ্যাৎ, উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে।
আরো পড়ুনঃ রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পল্লীবন্ধু এরশাদের সেরা ১০০টি অবদান
১৯০১ সালের ৬ জুন বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু রয়েল সোসাইটির এক সেমিনারে বক্তৃতা দেন। বক্তৃতার বিষয়বস্তু,- অজৈব বস্তুর বৈদ্যুতিক সাড়া’(Electric Response of Inorganic Substances)। পরের বছর ২০ মার্চ তিনি লিনিয়াস সোসাইটির এক সেমিনারে বক্তব্য রাখেন। এবারে সরাসরি উদ্ভিদের কথা বলা হয়।
৬। টমাস আলভা এডিসন
টমাস আলভা এডিসন গ্রামোফোন, ভিডিও ক্যামেরা এবং দীর্ঘস্থায়ী বৈদ্যুতিক বাতি সহ অনেক যন্ত্র তৈরি করেছেন। তাঁর আবিষ্কার বিংশ শতাব্দীর জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এডিসনের নামে ১,০৯৩টি মার্কিন পেটেন্টসহ যুক্তরাজ্যে, ফ্রান্স এবং জার্মানির পেটেন্ট রয়েছে।
৭। আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল
টেলিফোনের আবিষ্কারক হিসেবে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল পরিচিত। তাকে বোবাদের পিতা তথা দ্য ফাদার অফ দ্য ডেফ বলা হয়। তার পরিবারের সবাই অভিনয়ে জড়িত ছিলেন। তার মা ও স্ত্রী কথা বলতে পারতেন না। এ কারণেই বোবাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে তিনি অনেক গবেষণা করেছেন।
৮। মেরি ক্যুরি
প্রথম নারী বিজ্ঞানী হিসেবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন মেরি ক্যুরি। পদার্থবিজ্ঞানে তেজষ্ক্রিয়তা নিয়ে কাজ করার জন্য এবং রসায়নে পিচব্লেন্ড থেকে রেডিয়াম পৃথক করার জন্য তিনি নোবেল পান।
৯। ডাক্তার শাহ এম ফারুক
ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া থেকে কিভাবে মারাত্মক কলেরা হয় তার কারণ আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশের এক বিজ্ঞানী। আন্তর্জাতিক কলেরা রোগ গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআরবি`র আণবিক জেনেটিক্স বিভাগের প্রধান ডাক্তার শাহ এম ফারুক ও তার গবেষণা দল এ আবিষ্কার করেছেন। বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ খবর দিয়েছে।
১০। অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং
আলেকজান্ডার ফ্লেমিং একজন স্কটিশ ডাক্তার, জীববিজ্ঞানী, ফার্মাকোলজিস্ট এবং উদ্ভিদবিজ্ঞানী ছিলেন। ১৯২৩ সালে তাঁর সর্বপ্রথম আবিষ্কার এনজাইম লাইসোজাইম এবং বিশ্বের প্রথম এন্টিবায়োটিক পদার্থ বেনজাইলেননিসিলিন (পেনিসিলিন জি)। তিনি ১৯৪৫ সালে হোয়াড্ড ফ্লোরী ও আর্নেস্ট বরিস চেইন সহ পদার্থবিদ্যা বা মেডিসিনে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
১১। মাইকেল ফ্যারাডে
মাইকেল ফ্যারাডে তড়িৎ-চুম্বকীয় তত্ত্ব এবং ইলেক্ট্রো কেমিস্ট্রির ক্ষেত্রে ফ্যারাডের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। তিনি প্রমাণ করেছিলেন চুম্বকত্ব আলোক রশ্মিকে প্রভাবিত করে। তাঁর আবিষ্কারের প্রধান বিষয়বস্তুগুলোর মধ্যে রয়েছে তড়িৎ-চৌম্বকীয় আবেশ, ডায়াম্যাগনেটিজম ও তড়িৎ বিশ্লেষণ।
১২। আব্দুস সাত্তার খান
তিনি নাসা ইউনাইটেড টেকনোলজিস এবং অ্যালস্টমে কাজ করার সময়ে ৪০টিরও বেশি সংকর ধাতু উদ্ভাবন করেছেন। এই সংকর ধাতুগুলো ইঞ্জিনকে আরো হালকা করেছে, যার ফলে উড়োজাহাজের পক্ষে আরো দ্রুত উড্ডয়ন সম্ভব হয়েছে এবং ট্রেনকে আরো গতিশীল করেছে। তার উদ্ভাবিত সংকর ধাতুগুলো এফ-১৬ ও এফ-১৭ যুদ্ধবিমানের জ্বালানি সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তিনি ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেছেন।
১৩। অধ্যাপক আবুল হুসসাম
অধ্যাপক আবুল হুসসাম একজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী, তিনি দীর্ঘদিন গবেষণা করে কম খরচে ভূ-গর্ভস্থ আর্সনিকযুক্ত পানি পরিশোধনের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। তিনি এবং তার ছোট ভাই ডক্টর আবুল মুনির দু`জনে মিলে তৈরি করেন `সোনো ফিল্টার` নামে এই খাবার পানি থেকে আর্সেনিক নিষ্কাশন করার যন্ত্র। তাদের তৈরি এই যন্ত্র টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে নির্বাচিত হয়েছে ২০০৭ সালের পরিবেশ বিষয়ক অন্যতম সেরা আবিষ্কার হিসেবে।
প্রথমদিকে ডক্টর হুসসাম তৈরি করেন বেশ কিছু কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রোকেমিক্যাল এনালাইজার, অটোমেটেড টাইট্রেশন সিস্টেম এবং বেশ মূল্যবান এক ধরনের গ্লাস ক্রোমাটোগ্রাফ যার মাধ্যমে তিনি জটিল কোন ধরনের মিডিয়াতে প্রবাহিত পদার্থের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে এই আবিষ্কারটিই তাকে সূযোগ করে দেয় ভূ-গর্ভস্থ পানির অবস্থা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার। বিভিন্ন জার্নাল ও বইয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ডক্টর হুসসামের তবে তার বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এসেছে এই আর্সেনিক ফিল্টার আবিষ্কারের পর।
১৪। ড. মো. আব্দুল আহাদ
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর এর কীটতত্ত্ব বিভাগের ও বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আহাদ আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন গবেষণালদ্ধ তথ্য দ্বারা তিনি জীববিজ্ঞানের বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানীর থিওরী যথা, Oparin Theory (প্রথম এককোষী জীবের উৎপত্তি প্রসঙ্গে রাশিয়া ও ব্রিটেন বিজ্ঞানীর থিওরী), Neo-Darwinism, Lamarck Theory (সমগ্র উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের উৎপত্তি বা বিবর্তন প্রসঙ্গে থিওরী) ভুল প্রমাণ করেছেন।
তার গবেষণা প্রবন্ধ দুটি ভারত থেকে প্রকাশিত The International Journal of Bio-Resource and Stress management এ যথাক্রমে মার্চ ও জুন, ২০১১ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টিতে বাংলাদেশ ও ভারত এর বিজ্ঞানীদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে।
১৫। জাবির ইবনে হাইয়ান
প্রাচীনকালে কিমিয়া, তারপর আলকেমি আর বর্তমানে রসায়নশাস্ত্র। দুনিয়ার যত বিজ্ঞানী রসায়নশাস্ত্র নিয়ে গবেষণা করেছেন তাদের অন্যতম পুরধা হলেন জাবির ইবনে হাইয়ান। ৭২০ খ্রিস্টাব্দে ইরাকের কুফা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। কিমিয়া তথা রসায়নকে যারা প্রকৃত বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস পেয়েছেন জাবির ইবনে হাইয়ান হলেন তাদের স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা করলেও রসায়নবিজ্ঞান নিয়ে তার অবদানই সর্বাধিক। তিনি রসায়নের বিভিন্ন বিষয়ের উপর গবেষণা করে অনেক বই-পুস্তক লিখেছেন। ‘বুক অফ কম্পজিশন অফ আল-কেমি’ তাদের অন্যতম। এছাড়া জাবির ইবনে হাইয়ান অন্যান্য বিষয়ের উপর প্রায় পাঁচশো’রও অধিক বই রচনা করেছেন।
আরো পড়ুনঃ ১০০ বছর আগে কিভাবে টাইটানিক জাহাজ ডুবে গেছিল জানুন
রসায়নবিজ্ঞনের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র যথা পরিস্রবণ, দ্রবণ, ভস্মীকরণ, বাষ্পীকরণ, প্রভৃতি তাঁরই আবিষ্কার। তিনি তাঁর গ্রন্থে ধাতুর শোধন, তরলীকরণ, লোহা মরিচা রোধক বার্ণিশ, লেখার কালি ও কাঁচ ইত্যাদি দ্রব্য প্রস্তুতের প্রণালি ও বিধি সম্পর্কে বর্ণনা করেন। তিনি কুফায় একটি বিজ্ঞানাগার প্রতিষ্ঠা করে মৃত্যু পর্যন্ত সেখানেই গবেষণারত ছিলেন। জাবির ইবনে হাইয়ান রসায়নশাস্থের পরিপূর্ণতা দান করেন বিধায় তাকে রসায়নশাস্ত্রের ‘জনক’ বলা হয়। তিনি ৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।
ড্রিম সেন্টার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url