ইসলামের দৃষ্টিতে থার্টি ফার্স্ট নাইট - thirty first night
আসসালামু আলাইকুম। আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে`ইসলামের দৃষ্টিতে থার্টিফার্স্ট নাইট সম্পর্কে। আমরা অনেকেই মুসলমান হয়েও জেনে না জেনে থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন করছি, ইংরেজি নতুন বছরকে বরণ করে নিচ্ছি। যা অনেকেই জানি আবার অনেকেই জানিনা। তাই আজকে যারা এই বিষয়ে অবগত নন তাদের জন্য পোস্টটি লেখা হয়েছে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
আমরা যারা মুসলিম পরিবারের সন্তান তারা অনেকেই হয়তো জানি থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে। আবার অনেকেই আছে যারা থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে জানেনা। তাই আজকে আপনাদের মাঝে থার্টি ফাস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আলোচনা করব আমাদের শেষ নবী ও মহান আল্লাহ তা'আলা কি বলেছেন থার্টিফার্স্ট নাইটের সম্পর্কে। আশা করি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনি আপনার অজানা তথ্য সম্পর্কে জানতে পারবেন। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার অনুরোধ রইল।
সূচিপত্রঃ ইসলামের দৃষ্টিতে থার্টিফার্স্ট নাইট
- থার্টি ফাস্ট নাইট কি?
- থার্টি ফার্স্ট নাইট অর্থ কি?
- থার্টি ফার্স্ট নাইটের ইতিহাস
- ইসলামের দৃষ্টিতে থার্টি ফার্স্ট নাইট
- থার্টি ফার্স্ট নাইট পালনের ক্ষেত্রে যা যা ঘটে
- থার্টি ফার্স্ট নাইট ইসলাম কি বলে?
- শেষ কথাঃ ইসলামের দৃষ্টিতে থার্টি ফার্স্ট নাইট
থার্টি ফাস্ট নাইট কি?
থার্টি ফার্স্ট নাইট যা ডিসেম্বরের ৩১ তারিখে রাত ১২ টার পর সারা বিশ্বে পালন করা হয়। থার্টি ফার্স্ট নাইট হচ্ছে ক্রিস্টিও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বরের দিবাগত রাত। বলা যায় পহেলা জানুয়ারির প্রথম প্রহর। রাত বারোটার পর অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১:৫৯ মিনিট পার হয়ে ১২ টা বাজার পর পরই সারা বিশ্বে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মূলত এটি নতুন বছরকে বরণ করার একটি প্রক্রিয়া। নতুন বছরকে বরণ করার জন্য এই থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপিত হয়।
আরো পড়ুনঃ লেখালেখি করে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করুন
এই সময় নানা অনুষ্ঠান, নাচ-গান, আতশবাজি ইত্যাদি আয়োজনের মাধ্যমে পালিত হয়।
সারা বিশ্বে পালন হলেও কিছু কিছু মুসলিম রাষ্ট্রে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন হয়
না। তার মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, নেপাল, ইসরাইল, আফগানিস্তান ইত্যাদি রাষ্ট্র।
তারা খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডার অনুসরণ করলেও এই দিনটি উদযাপন করে না। আর মূলত এই ৩১
ডিসেম্বর রাতকে নিউ ইয়ার রাত বলে ডাকা হয়। এই থার্টি ফার্স্ট নাইট ১৯৫২
সাল থেকে উদযাপন করে আসছে বিশ্বের বহু মানুষ। চলুন জেনে নেওয়া যাক থার্টি
ফার্স্ট নাইট অর্থ কি।
থার্টি ফার্স্ট নাইট অর্থ কি?
এই থার্টি ফার্স্ট নাইট মূলত ইংরেজি শব্দ। যার অর্থ যথাক্রমে থার্টি অর্থ ৩০ এবং ফার্স্ট অর্থ প্রথম আর নাইট অর্থ রাত। যার অর্থ গিয়ে দাঁড়ায় ৩১ এর রাত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ইংরেজির নতুন বছরকে বরণ করার জন্য এই দিবস পালন করা হয়ে থাকে।
এই রাতে বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালন করা হয়। এর আছে সেই নতুন বছরের সূর্য উদয় হয়।
যা মূলত খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পালন করা হয়। পুরনো বছরের সব দুঃখ কষ্ট
মুছার জন্য একটি উৎসবের মাধ্যমে নতুন একটি বছরকে বরণ করে এ দিবসটি পালন করা হয়ে
থাকে। যা থার্টি ফার্স্ট নাইট নামে পরিচিত। এটিকে নিউ ইয়ার ইভ ও বলা
হয়।
থার্টি ফার্স্ট নাইটের ইতিহাস
থার্টিফার্স্ট নাইটের ইতিহাস অনেক বড়। খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে (জুলিয়াস সিজার) এর মাধ্যমে সর্বপ্রথম ইংরেজি থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন শুরু হয়। যা পরবর্তীতে (সম্রাট জমসিদ) খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ 00 সালের দিকে এই প্রচলন শুরু করে। যা এখনো নওরজে প্রচলন রয়েছে। যা তাদের জাতীয় উৎসব হিসেবে পরিচিত।
তারপরও এটি পারস্য হতে সকল দেশে এমন কি ভারত সহ বিভিন্ন দেশে থার্টি ফার্স্ট নাইট চালু হয়। আর মূলত গ্রীকদের নববর্ষ শুরু হতো খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দী পর্যন্ত একুশে ডিসেম্বর। এভাবে বিভিন্ন রীতিতে বিভিন্নভাবে পালন করা হতো। যা থার্টি ফার্স্ট নাইটের ইতিহাস থেকে পাওয়া যায়। এরপর পরবর্তীতে খ্রিস্টীয় রীতি অনুযায়ী সারা পৃথিবীতে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে ৩১ ডিসেম্বরে নববর্ষ পালন করা হতো। শুধুমাত্র মুসলিম দেশে এই নববর্ষ পালন করা হতো না।
আর ইংরেজি সাল মূলত গণনা করতো গ্রেগরিয়ান বা খ্রিস্টানরা। তাদের হাত ধরেই এই ইংরেজি সাল গণনা শুরু হয়। ইংরেজরা এটি আবিষ্কার করেনি। ১৭৫২ সালে ইংরেজরা প্রথমে একলা জানুয়ারি কে ইংরেজি নববর্ষ হিসেবে পালন করা শুরু করেছিল। তাই বলা যায় থার্টিফার্স্ট নাইটে ইতিহাস অনুযায়ী এটি গ্রেগরিয়ান নববর্ষ।
ইসলামের দৃষ্টিতে থার্টি ফার্স্ট নাইট
ইসলামের দৃষ্টিতে থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন করা পুরোপুরি ভাবে নিষিদ্ধ। কারণ থার্টি ফার্স্ট নাইট মূলত খ্রিস্টীয় সংস্কৃতি। আর ইসলাম খ্রিস্টীয় সংস্কৃতি অনুসরণ করে না। যারা মুসলমান হয়েও খ্রিস্টীয় সংস্কৃতি অনুসরণ করে তারা আখিরাতে বিপদগ্রস্ত হবেন। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই এই উৎসব পালিত হচ্ছে। তবে মুসলমান দেশে এই থার্টি ফার্স্ট নাইট পালন করা হয়না। যারা মুসলিম হয়েও এই দিবসটি পালন করে তাদের জন্য ইসলামে পুরোপুরিভাবে নিষিদ্ধ করা রয়েছে বা অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ ফাইবার মার্কেটপ্লেসে কিভাবে কাজ করতে হয়
অন্য কোন ধর্মের রীতিনীতি পালন করা মুসলমানদের জন্য বৈধ নয়। বরং এটি শাস্তির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে আখিরাতে। আর থার্টিফার্স্ট নাইট যেহেতু খ্রিস্টীয় সংস্কৃতি থেকে এসেছে তাই ৩১শে ডিসেম্বর পালিত দিবস টি মুসলমানদের জন্য নয়।বরং এটি পুরোপুরি ভাবে নিষিদ্ধ।
আল্লাহ তা'আলা কুরআনের মাধ্যমে বলেছেন, 'যে ব্যক্তি ইসলাম(ইসলামের রীতিনীতি) ছাড়া অন্য কোন ধর্ম অনুসরণ করবে কখনো তার সেই আমল গ্রহণ করা হবে না। পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।'(সূরা আল-ইমরান, আয়াত:৮৫) আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যে ব্যক্তি অন্য জাতির আচার-আচরণে সভ্যতা সংস্কৃতিতে সামঞ্জস্য করবে সে ওই দলের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে।'(আবু দাউদ)।
উপরোক্ত কুরআনের বাণী ও হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘোষণা
অনুযায়ী থার্টিফার্স্ট নাইট পুরোপুরিভাবে আমাদের জন্য হারাম। তাই আমাদের উচিত এই
হারাম থেকে দূরে থাকা। সব সময় ইসলামের বিধান অনুযায়ী জীবন যাপন করা।
থার্টি ফার্স্ট নাইট পালনের ক্ষেত্রে যা যা ঘটে
থার্টি ফার্স্ট নাইট বা ইংরেজি নববর্ষ মুসলমানদের জন্য একটি হারাম উৎসব। তাই এই
উৎসব পালন করার সময় বিভিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে। যা ইসলামের ক্ষেত্রে না করা হয়েছে।
এই উৎসব পালন করার ক্ষেত্রে অনেক কিছু ঘটে যায়। আপনাদের মাঝে এখন তুলে ধরা
হবে।
১.অন্য ধর্ম বা বিধর্মীদের সঙ্গে সদস্যঃ
যেহেতু থার্টি ফার্স্ট নাইট খ্রিস্টীয় একটি রীতি তাই একটি উদযাপন করলে
বিধর্মীদের সঙ্গে সদৃশ্য করা হবে। আমাদের প্রিয় নবী বলেছেন যে ব্যক্তি ইসলাম
ছাড়া অন্য কোন ধর্মের অনুসরণ করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। তাই থার্টি
ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা থেকে আমাদের মুসলিমদের বিরোধ থাকতে হবে।
২. আতশবাজি ও পটকা ফোটানোঃ
এই উৎসব পালনের ক্ষেত্রে প্রায়শয় সবাই মধ্যরাতে আতশবাজি ও পটকা ফোটানোতে মেতে উঠে। আর এই আতশবাজির শব্দতে। মানুষের অনেক অসুবিধা হয়ে থাকে। তাছাড়া আতশবাজি ফোটানোর ক্ষেত্রে অনেক সময় বড়সড়ো দুর্ঘটনার কবলে পড়তেও দেখা যায়। এই কারণে সাধারণ জনগণ বিরক্ত বোধ করেন। আল্লাহ তাআলা এ প্রসঙ্গে বলেন,' যারা বিনা অপরাধে মমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয় তারা মিথ্যা অপবাদে প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।'(সূরা আল আহযাব, আয়াত: ৫৮)
৩. গান বাজনা বাজানোঃ
আজকাল সকল বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয় ডিজে পার্টি, ফায়ার প্লে, ফানুস উড়ানো, ফ্যাশন
শো, কনসার্ট, অশ্লীল নৃত্য ইত্যাদি কাজগুলোর মাধ্যমে। যা একজন মুসলিমকে পথভ্রষ্ট
করে। ইসলামে বলা হয়েছে যে বা যারা মানুষকে আলোর পথ থেকে পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্য
অবলম্বন করে তাদের জন্য রয়েছে অবমাননা কর শাস্তি।
৪. মাদক সেবন করাঃ
থার্টি ফার্স্ট নাইট পালনের সময় মাদক পান একটি ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করলে তরুণ তরুণীরা মাদক পান করে থাকে। মাতাল হয়ে নানা রকম অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে। অথচ ইসলামে মাদককে পুরোপুরিভাবে নিষেধ করা হয়েছে। আর তরুণ তরুণীরা থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে ইসলামের কথা না ভেবে তারা এসব মদপানে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
থার্টি ফার্স্ট নাইট ইসলাম কি বলে?
থার্টি ফার্স্ট নাইট মূলত এই ডিসেম্বরের মধ্যরাত অর্থাৎ বারোটা এক মিনিট বাজলে উদযাপন করা হয়। আর যেহেতু এটি খ্রিস্টীয় রীতিয় নীতি অনুযায়ী চালু হয়েছে সে ক্ষেত্রে এটি মুসলমানদের জন্য বৈধ নয়। ইসলামে স্পষ্ট ভাবে থার্টি ফাস্ট নাইট কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আরো পড়ুনঃ ফেসবুক থেকে টাকা ইনকাম করার ৫টি উপায়
যারা মুসলিম হয়েও থার্টিফার্স্ট নাইট অর্থাৎ ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন করে থাকে
তাদের জন্য আখিরাতে ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করে রয়েছে। তাই মুসলমান হয়ে আমাদের
উচিত থার্টিফার্স্ট নাইটে অর্থাৎ ইংরেজি নববর্ষ পালন থেকে বিরত থাকা। মুসলমানদের
উচিত আমাদের আল কুরআন আমাদের প্রিয় নবীর দেখানো পথ অনুসরণ করে জীবন যাপন করা ও
এসব রীতিনীতি থেকে বিরত থেকে সুন্দর জীবন গড়ে তোলা।
শেষ কথাঃ ইসলামের দৃষ্টিতে থার্টি ফার্স্ট নাইট
আমাদের আজকের পোস্টটি ইসলামের দৃষ্টিতে থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে লিখা হয়েছে। আশা করি আপনি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ে আপনার কাঙ্খিত সমস্যার সমাধান করতে পেরেছেন। জানতে পেরেছেন সকল অজানা তথ্যগুলো। আর আমরা প্রতিনিয়তই এসব অজানা তথ্য আপনাদের সামনে নিয়ে আসার জন্য কাজ করি। আশা করি এতক্ষণ পোষ্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি যদি মুসলমান হয়ে থাকেন তাহলে। ইংরেজি নববর্ষ পালন থেকে দূরে থাকবেন।
সোশ্যাল মিডিয়াতে থার্টি ফার্স্ট নাইটের স্ট্যাটাস দেওয়া থেকেও বিরত
থাকবে। এতক্ষণে বুঝতে পেরেছেন কেন থার্টিফার্স্ট নাইট ইসলামে বৈধ নয়। আশা করি
আপনি নিজে বিরত থাকবেন এবং অন্যকে এর থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবেন। এরকম আরো
তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আসসালামু আলাইকুম।
ড্রিম সেন্টার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url