ফ্রিল্যান্সার হতে কি কি শিখতে হয় । মার্কেটপ্লেসে কিভাবে কাজ পাওয়া যায়
ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নেওয়ার পর অনেকেই ভাবেন "আমি কি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারব" এ প্রশ্নের উত্তর পেতে কী ধরনের কাজে আপনি দক্ষ বা আপনার দক্ষতা বাড়াতে হবে তা জানতে হবে। আপনি শিক্ষার্থী, গৃহিণী বা যে পেশাতেই থাকেন না কেন, অবশ্যই নিচের বিষয়গুলো জানতে হবে।
বিশ্বজুড়ে দিন দিন বাড়ছে ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশাজীবীদের কাজের পরিমাণ। কারণ, বেশির ভাগ উন্নত দেশেই স্থায়ী কর্মীর বদলে আউটসোর্সের মাধ্যমে কাজ করানোর বিষয়টি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ, আউটসোর্স করলে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা খরচ কম হওয়ায় লাভের পরিমাণ বেশি হয়। এ জন্য উন্নত বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠানই বর্তমানে তাদের কাজের কিছু অংশ নিয়মিত আউটসোর্স করে। ফলে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশা পাশি ফ্রিল্যান্সার বা মুক্ত পেশা জীবীদের চাহিদাও বাড়ছে।
পোস্ট সূচীপত্রঃ ফ্রিল্যান্সার হতে কি কি শিখতে হয় এবং মার্কেটপ্লেসে কিভাবে কাজ পাওয়া যায়
- ফ্রিল্যান্সার হওয়ার পূর্বে আপনার করণীয়
- ফ্রিল্যান্সার হতে কি কি শিখতে হয়
- ফ্রিল্যান্সিং কাজের ধরন
- মার্কেটপ্লেসে কিভাবে কাজ পাওয়া যায়
- সর্বশেষ কথা-ফ্রিল্যান্সার হতে কি শিখতে হয়
ফ্রিল্যান্সার হওয়ার পূর্বে আপনার করণীয়
- ফ্রিল্যান্সিং করার আগে আপনি কোন বিষয়ে (গ্রাফিক ডিজাইন, মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন ইত্যাদি) দক্ষ, তা ভালোভাবে জানতে হবে। কারণ, নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা না থাকলে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করা বেশ কঠিন।
- আপনাকে অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। কোনো কাজ নেওয়ার সময় অবশ্যই ভেবে দেখতে হবে আপনি কাজটি নির্দিষ্ট সময়ে ভালোভাবে শেষ করতে পারবেন কি না। এ জন্য অনলাইন মার্কেটপ্লেসে নিজের দক্ষতা ভালোভাবে উপস্থাপন করতে হবে। ক্লায়েন্টকে জানাতে হবে যে আপনি তার কাজের জন্য উপযুক্ত।
- ইংরেজি ভাষা ভালোভাবে জানতে হবে। ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কথা বলা এবং কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে।
- কাজ করার সময় বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কৌশল জানতে অনলাইনে দ্রুত এবং সঠিকভাবে তথ্য খোঁজার কৌশল জানতে হবে। কারণ, ফ্রিল্যান্স কাজ করতে গেলে মাঝেমধ্যেই বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়, যা ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সমাধান করা সম্ভব।
- ক্লায়েন্টের সমস্যা সমাধানের মনমানসিকতা থাকতে হবে। কোনোভাবে জোড়াতালি দিয়ে কাজ জমা দেওয়া যাবে না। শুধু তা–ই নয়, ক্লায়েন্টের চাহিদামতো একাধিকবার জমা দেওয়া কাজে পরিবর্তন আনার মানসিকতাও থাকতে হবে।
কোনো প্রতিষ্ঠানে পূর্ণকালীন কাজ করেও কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং করা যায়। এ জন্য অবশ্যই আপনি যে বিষয়ে দক্ষ, সে বিষয়েই কাজ করতে হবে। কারণ,আপনি যদি নতুন কোনো বিষয়ে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে চান, সেটা অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে। এ জন্য আপনাকে অবশ্যই সে বিষয়ে ভালোভাবে কাজ শিখে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। বিষয়টি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিই। ধরুন, আপনি একজন গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।
আপনি চাচ্ছেন অবসর সময়ে বাসা থেকে ফ্রিল্যান্সিং করবেন। আপনি যদি গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবেই ফ্রিল্যান্সিং করেন তাহলে আপনার জন্য কিছুটা সহজ হবে। কারণ, গ্রাফিক ডিজাইনে দক্ষ হওয়ায় ক্লায়েন্টের চাহিদামতো কাজ আপনি সহজেই জমা দিতে পারবেন। ফলে আপনাকে নতুন করে শুধু অনলাইনে কাজ পাওয়ার কৌশল জানতে হবে। কিন্তু আপনি যদি গ্রাফিক ডিজাইনারের বদলে থ্রিডি অ্যানিমেটর হিসেবে কাজ করতে চান, তবে আপনাকে নতুন করে থ্রিডি অ্যানিমেশন শিখতে হবে তারপর কাজ পাওয়ার কৌশল শিখতে হবে।
কী শিখলে ফ্রিল্যান্সিং করা যাবে
অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বিভিন্ন ধরনের কাজ পাওয়া যায়। আর তাই আপনার যে বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত। সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যে বিষয় নিয়ে পড়াশোনা বা চাকরি করছেন, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়া। তবে মনে রাখতে হবে, কোনো বিষয়ে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়েই অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ সংগ্রহ করা ঠিক হবে না। কারণ, এতে ক্লায়েন্ট আপনার কাজে অসন্তুষ্ট হয়ে খারাপ রেটিং দেবে। ফলে ভবিষ্যতে অন্য ক্লায়েন্টরা আপনাকে কাজ দেবে না। এমনকি মার্কেটপ্লেসে থাকা আপনার প্রোফাইল বাতিলও হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ ইউটিউব থেকে টাকা আয় করার সহজ উপায়
ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে প্রযুক্তিনির্ভর কাজের সংখ্যা বেশি থাকায় নিজেকে প্রযুক্তিতে সব সময় হালনাগাদ রাখতে হবে। পাশাপাশি দ্রুত আয়ের মানসিকতা বাদ দিয়ে সময় নিয়ে ভালোভাবে কাজ শেষ করতে হবে। ফলে ক্লায়েন্টরা আপনার কাজে খুশি হয়ে ভালো রেটিং দেবে, যা দেখে অন্য ক্লায়েন্টরাও ধীরে ধীরে আপনাকে কাজ দিতে শুরু করবে। ফলে আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবেন।
অনেকেই মনে করেন, দুই থেকে চার মাস ফ্রিল্যান্সিং করলেই অনেক টাকা আয় করা যায়। এ ধারণা একদম ভুল। ভালোভাবে যেকোনো কাজ শিখে ফ্রিল্যান্সিং করার সময় প্রথমে আয়ের পরিমাণ খুব কম থাকে। ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে কাজ পেতেও অনেক বেশি সময় প্রয়োজন হয়। আর তাই হাতে যথেষ্ট সময় এবং ধৈর্য থাকলেই কেবল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজের চিন্তা করতে হবে৷
ফ্রিল্যান্সিং কাজের ধরন
বর্তমানে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে সাধারণত দুই ধরনের কাজ বেশি করেন ফ্রিল্যান্সাররা। রিমোট ও প্রকল্পভিত্তিক কাজ। রিমোট কাজ বলতে দূর থেকে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করাকে বোঝায়। এ পদ্ধতিতে কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার মতোই প্রতি মাসে ১৪০ থেকে ১৬০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। দিন দিনই এ ধরনের কাজের চাহিদা বাড়ছে। কারণ, অনলাইনে কাজ করিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকায় সরাসরি কর্মী নিয়োগ দিতে হয় না প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
ফলে অফিস পরিচালনা ব্যয় কম হয়। ফ্রিল্যান্সারদের কাছেও এ ধারনের কাজ বেশ জনপ্রিয়। কারণ, অনলাইন মার্কেটপ্লেসে নিয়মিত কাজ খোঁজার চেয়ে রিমোট কাজ বেশ স্বচ্ছন্দে করা যায়। এতে নিয়মিত আয়ও করা যায়। বর্তমানে ছোট প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক বড় প্রতিষ্ঠানও রিমোট কাজের জন্য কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজে সুযোগ নিশ্চিতভাবে বৃদ্ধি পাবে। অনলাইন মার্কেটপ্লেসের প্রকল্পভিত্তিক কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে আমরা প্রায় সবাই কমবেশি জানি।
আরো পড়ুনঃ ফেসবুক থেকে টাকা আয় করার সহজ উপায়
এ ধরনের কাজগুলো (গ্রাফিকস, ওয়েব, ভিডিও সম্পাদনা, নিবন্ধ লেখা, অনলাইন সহকারী ইত্যাদি) মূলত ব্যক্তিগত প্রকল্প হিসেবে পরিচিত। এসব কাজ করার জন্য অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে অনেক দক্ষ কর্মী থাকায় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই নিজেদের কাজগুলো আউটসোর্স করে থাকে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ দেওয়ার আগেই ফ্রিল্যান্সারদের কাজের অভিজ্ঞতা, মান এবং সফলতার হার দেখা যায়। ফলে সহজেই দক্ষ কর্মী খুঁজে পাওয়া যায়।
বিষয়টি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিই। ধরুন, যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একটা ওয়েবসাইট তৈরি করবে। যুক্তরাষ্ট্রে ওয়েবসাইটটি তৈরি করতে ৫ থেকে ১০ হাজার ডলার খরচ হলেও একইকাজ অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ২ থেকে ৪ হাজার ডলারের মধ্যে করানো সম্ভব। এ জন্য ওয়েবসাইটটি তৈরি করতে আগ্রহী ফিল্যান্সারদের বিস্তারিত তথ্য পর্যালোচনা করে দক্ষ কর্মী নিয়োগ দিতে পারবে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে কম খরচে নিজেদের প্রয়োজনমতো ওয়েবসাইট তৈরি করা যাবে। ক্লায়েন্ট এবং ফ্রিল্যান্সার—উভয়ই লাভবান হওয়ায় অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
মার্কেটপ্লেসে কিভাবে কাজ পাওয়া যায়
অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজের পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে একই কাজের জন্য কয়েক শ ফ্রিল্যান্সার নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছেন। ফলে চাইলেই ইচ্ছেমতো কাজ পাওয়া যায় না অনলাইন মার্কেটপ্লেসে। ক্লায়েন্টরাও চায় কম খরচে দক্ষ ব্যক্তির মাধ্যমে কাজ করিয়ে নিতে।
ফলে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ পেতে হলে নিজেকে নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ করার পাশাপাশি নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে হবে। ক্লায়েন্টের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের পাশাপাশি কাজ নির্দিষ্ট সময়ে জমা দিতে হবে আপনাকে। মনে রাখতে হবে, কাজের মান খারাপ হলে ক্লায়েন্ট আপনাকে কম রেটিং দেবে, যা দেখে অন্য ক্লায়েন্টরা আপনাকে আর কোনো কাজ দেবে না। একাধিকবার কম রেটিং পেলে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে আপনি আর কাজ করতে পারবেন না ৷
আরো পড়ুনঃ মোবাইল দিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চাপ দিন
নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনার দক্ষতা থাকলে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়ার জন্য খুব বেশি চিন্তা করতে হবে না। শুরুতে কাজের পরিমাণ বা আয় কম হলেও ধীরে ধীরে কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য অবশ্যই আপনাকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার পাশাপাশি আপনি যে কাজে দক্ষ, সে বিষয়ে হালনাগাদ প্ৰযুক্তি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে।
ড্রিম সেন্টার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url