কোরবানি করার সঠিক নিয়ম - কোরবানির পশু জবাই করার দোয়া
সবাই ভালো হয়েছে তুই ভালো আছিসপ্রিয় মুসলমান ভাই ও বোনেরা আজকের পোস্টটি হবে কোরবানি সম্পর্কে। এই পোষ্টের মধ্যে আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি কোরবানি করার সঠিক নিয়ম এবং কোরবানির পশুর জবাই করার দোয়া সম্পর্কে। আশা করি পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়লে কোরবানি করার সমস্ত নিয়মকানুন জেনে যাবেন।
এছাড়াও এই পোস্টের মধ্যে আমরা কোরবানির ঈদ সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য উপস্থাপন করব। তাই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন আর জানুন কোরবানি করার সঠিক নিয়ম এবং কোরবানির পশু জবাই করার দোয়া। তাই চলুন দেরি না করে পড়া শুরু করা যাক এবং জেনে নেয়া যাক কোরবানির পশুর জবাই করার দোয়া এবং নিয়ম।
আজকের পোষ্ট সূচিপত্রঃ কোরবানি করার সঠিক নিয়ম এবং কোরবানির পশুর জবাই করার দোয়া
- কোরবানি কেন করা হয়
- কোরবানি কাদের উপর ওয়াজিব
- কোরবানি করার সঠিক নিয়ম
- কোরবানির পশু জবাই করার দোয়া
- কয়জন কোরবানি দেয়া সবচেয়ে উত্তম
- সর্বশেষকথা - কোরবানি করার সঠিক নিয়ম
কোরবানি কেন করা হয়
কোরবানি হচ্ছে ঈদুল আযহার দিনে পশু জবাই করাকে বোঝায়। কোরবানি কেন করা হয় জেনে নিন। আল্লাহতালা প্রতিটি মুসলমান আদেশকৃত বিধান। তাই প্রতিটি মুসলমান আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের আশায় নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট দিনে কোরবানি করে থাকে। মুসলমানদের কোরবানি করার মূল লক্ষ্য হলো আল্লাহ তায়ালার তাকওয়া অর্জন করা।
আরো পড়ুনঃ ঈদ-উল-আজাহার নামাজ আদায়ের নিয়ম কানুন
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছে ঠিকই কিন্তু তাদের কোরবানির থেকে কোন কিছুই ভাগ নেই না শুধু মুসলমানদের তাকওয়াটা আল্লাহতালা গ্রহণ করে থাকে। আর এই তাকওয়া পরীক্ষার করার জন্যই আল্লাহতালা কোরবানি সবারই উপর ফরজ করে দিয়েছে। তবে কোরআনের কয়েকটি সূরায় কোরবানি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা আছে আপনি চাইলে কুরআন মাজীদ পড়ে কোরবানি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিয়ে নিতে পারেন।
এতক্ষণে আশা করছি জেনে গেছেন কোরবানি কেন করা হয় এবং কোরবানি কার জন্য করা হয় এই সম্পর্কে। পোস্টটি আরো মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন তাহলেই জানতে পারবেন কোরবানি করা সঠিক নিয়ম এবং কোরবানির পশু জবাই করার দোয়া সম্পর্কে।
কোরবানি কাদের উপর ওয়াজিব
আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ অনুযায়ী কোরবানি সবার উপরই ফরজ। তবে যার যতটুকু সামর্থ্য আছে সে ততটুকু অনুযায়ী কোরবানি করতে পারে। কেউ যদি গরু কোরবানি না দিতে পারি তাহলে সে ছাগল কোরবানি দিবে এবং কেউ যদি ছাগলও কোরবানি না দিতে পারে তাহলে তার চেয়ে কম দামি কিছু কোরবানি দিতে পারে যেমন ভেড়া।
হাদিসে অনুযায়ী স্বাভাবিকজ্ঞান সম্পদ এবং প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম যদি হিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে থাকেন তবে সেই ব্যক্তির পক্ষে কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব বা অবশ্যক হয়ে গেছে। এখানে নিশা বলতে বোঝানো হয়েছে সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা অথবা এর সম পরিমাণ নগদ টাকা ও ব্যবসা পণ্য বা সম্পদের মালিক হলে। তাহলে আশা করছি জানলেন কোরবানি কাদের ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে এ সম্পর্কে।
কোরবানি করার সঠিক নিয়ম
কোরবানি হলো অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও ফজিলতম একটি ইবাদত। যা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ইবাদতের জন্য পশু জবাই করাই হলো কোরবানি। যেমন ঈদুল আযাহার অভিষেদ্ধ অংশবিশেষ হল এই কোরবানি। আর এই কুরবানীর অবিচ্ছেদ্য অংশ হল সুস্থ সবল পশু।
আর আল্লাহর আদেশ এবং সন্তুষ্টি লাভের আশায় এই পশু জবাই করাকেই বলা হয় কোরবানি। যা প্রতিটি সামর্থ্যবান নারী পুরুষের ওপর ওয়াজিব করা হয়েছে। এছাড়াও পবিত্র আল কুরআনে বর্ণিত করা আছে। "তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাসো তাহলে আমাকে অনুসরণ করো আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন" (সূরা আল ইমরান আয়াত নাম্বার ৩১)
এখন চলুন জেনে নিই নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট দিনে কোরবানি করা সঠিক নিয়ম কানুন গুলো সম্পর্কে। কোরবানি করার সঠিক দিন হল ঈদুল আযহার দিন। যেই দিনে মুসলমান জাতির ঈদ আনন্দ উদযাপিত হয়। সেই দিনে ঈদুল আযহা নামাজ শেষ করে পশু জবাই বা কোরবানি করা হয়। আর এই কুরবানী করার নিয়ম কানুন গুলো হল।
পশু জবাই করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে পরশু জবাই করতে গিয়ে যেন কষ্ট না পায়। জবাই করার পূর্বেই জবাইয়ের জন্য প্রস্তুতকৃত ছুরি বা ধারালো অস্ত্র শান দিয়ে রাখা। এরপর যিনি জবাই করবেন তাকে অবশ্যই জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে এবং তাকে ওযু করে থাকতে হবে এবং তার পোশাক পরিধান পবিত্র হতে হবে। তবে একটা কথা জেনে রাখেন, যিনি বা যার কোরবানি দিবেন তিনি যদি নিজেই কোরবানি করেন তাহলে সবচেয়ে বেশি উত্তম।
তারপর পশুর গলায় ছুরি চালানোর সময় "বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার" বলতে হবে অথবা শুধু "বিসমিল্লাহ" বললেও কোরবানি হয়ে যাবে। দোয়া পাঠ করার পর পশুর গলায় ছুরি চালিয়ে তাকে জবাই করতে হবে। যিনি জবাই করবেন তার হাতের ছুরি ডান হাতে থাকা ভালো এবং কোনক্রমে শুধু বাঁ হাতে ছুরি ধরে জবাই করা উচিত নয়।
ছুরি চালানোর সময় পশুর গলায় মূল তিনটি অংশ বা অঙ্গ ভালোভাবে কেটে দিতে হবে। অংশগুলো হল প্রথমটি খাদ্যনালী এবং দ্বিতীয়টি শ্বাসনালী আর তৃতীয়টি হচ্ছে শ্বাসনালী দুই পাশে দুইটি রগ রয়েছে সেই দুইটি রগ। আর এই অঙ্গগুলো যদি ঠিকভাবে কেটে দেয়া যায় তাহলেই ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে পশু নিস্তেজ হয়ে পড়বে। এই ভাবেই পশু জবাই করা সুন্নত।
তবে যে বা যারা জবাই করার সময় পশুকে ধরবে তারা অবশ্যই পবিত্র অথবা অজু করে
থাকতে হবে। এবং তাদের কাপড়-চোপড় শালীনভাবে পরিধান করে থাকতে হবে। তবে
একটা কথা মাথায় রাখবেন পশুর ছোয়াতে গিয়ে বা জবাই করতে গিয়ে যদি আপনি রেগে
যান এবং জবাই করা শেষ করে পশুর শরীরে কিল, ঘুষি, লাথি মারেন সাবধান এই সমস্ত
ভুলেও করবেন না। তাহলে আশা করছি এতক্ষণে কোরবানি করা সঠিক নিয়মকানুন বলে
আপনি জেনে গেছেন।
কোরবানির পশু জবাই করার দোয়া
কোরবানির পশু জবাই করার বিভিন্ন দোয়া রয়েছে যে দোয়াগুলো বললেও হয় আবার না
বললেও হয় তবে জবাই করার পূর্বে অবশ্যই "বিসমিল্লাহ অথবা বিসমিল্লাহ আল্লাহু
আকবার" বলা অবশ্যক। আর আপনি যদি চান কোরবানির পশু জবাই করার জন্য সম্পূর্ণ
দোয়া গুলো পাঠ করবেন তাহলে সেই দোয়াগুলো সম্পর্কেও জেনে নিন।
কোরবানির পশু যখন কেবলার দিকে মুখ করে শোয়ানো হবে তখন এই দোয়াটি পাঠ করতে হয়।
বাংলা উচ্চারণঃ "ইন্নি ওয়াঝঝাহতু ওয়াঝহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাও ওয়া মা আনা মিনাল মুশরিকিন। ইন্না সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। লা শারিকা লাহু ওয়া বি-জালিকা উমিরতু ওয়া আনা মিনাল মুসলিমিন। আল্লাহুম্মা মিনকা ও লাকা"।
এরপর বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার বলে কোরবানির পশু জবাই করতে হয়। এবং কোরবানির পশু জবাই করা শেষ করে এই দোয়াটি পড়তে হয়।
বাংলা উচ্চারণঃ "আল্লাহুম্মা তাকাব্বালহু মিন্নি কামা তাকাব্বালতা মিন হাবিবিকা মুহাম্মাদিও ওয়া খালিলিকা ইবরাহিমা আলাইহিমাস সালাতা ওয়াস সালাম"।
আরো পড়ুনঃ বিসমিল্লাহ বলার ফজিলত
তবে এর মাঝে একটি হাদিস জেনে নিন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিজের কোরবানির পশু তিনি নিজেই জবাই করতেন।
সুবহানাল্লাহ।
তাহলে আশা করছি এতক্ষণে জেনে গেছেন কোরবানির পশু জবাই করার দোয়া সম্পর্কে। এবং কোথায় কোন দোয়া পড়তে হয় সেই সম্পর্কেও আশা করি বিস্তারিত জেনে গেছেন। এখন আপনি কোরবানির সময় এই দোয়াগুলো পাঠ করতে পারবেন এবং যারা জানে না তাদের জানাতে পারবেন।
কয়জন কোরবানি দেয়া সবচেয়ে উত্তম
ভাগে কোরবানি দেয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই ৭ জন ভাগ নিয়েকোরবানি দিয়ে থাকে। এভাবেও কোরবানি দেয়া উত্তম আছে কিন্তু একা একটি কোরবানি দেয়া সবচেয়ে বেশি উত্তম। এই কথাটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। কোরবানি সম্পর্কে কিছু মাসালা গুলো জেনে নিন।
১ম মাসআলাঃ কেউ যদি চায় মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ হয়ে কোরবানি করতে পারবেন।এছাড়াও মৃত ব্যক্তি বা আত্মীয়-স্বজন জীবিত আত্মীয়-স্বজনের পক্ষ থেকেও কোরবানি করা ইসলামে জায়েজ আছে।
২য় মাসআলাঃ যদি একটি গরুতে ৭ জনের কম ৫ থেকে ৬ জন শরিক হয় এবং কারো অংশে সাত ভাগের কম না হয় যেমন (৭০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনলে কারো অংশ যেন দশ হাজার টাকা কম না হয়) তবে সবার কোরবানির জায়েজ হবে আর যদি ৮ জন অংশীদার হয় তবে কারো কোরবানি বৈধ হবে না।
৩য় মাসআলাঃ গর্ভবতী পশু কোরবানি করা জায়েজ আছে। যদি জবাই করার পর পেটের বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তবে সেই বাচ্চাটিও জবাই করতে হবে।
চতুর্থ মাসআলাঃ কোরবানির চামড়া এমনিতেই দান করে দেয়া মুস্তাহাব অথবা ভালো। কিন্তু যদি চামড়া বিক্রি করে দেয় তবে এর মূল্য হিসেবে প্রাপ্য টাকাটাই গরিবকে দান করতে হবে। ওই টাকা নিজে খরচ করে যদি অন্য টাকা দান করে তবে আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু অনুত্তম হবে।
পঞ্চম মাসআলাঃ কোরবানির চামড়ার দাম মসজিদ মেরামত বা অন্য কোন ভালো নেক কাজে খরচ করা জায়েজ নয় বরং গরিবদের কে দান করাই উত্তম।
ষষ্ঠ মাসআলাঃ কারো ওপর যদি কোরবানি ওয়াজিব হয়। কিন্তু কোরবানি তিনটি দিনই চলে গেল অথচ কোরবানি পশু ক্রয় করল না। এমত অবস্থায় একটি বকরি বা ভেড়ার মূল্য দান করতে হবে। আর যদি বকরি কিনে থাকে তবে ওই বকরিটির দান করে দিতে হবে।
সপ্তম মাসআলাঃ কোরবানির পশু জবাই কারী ও মাংস প্রস্তুতকারী পারিশ্রমিক আলাদাভাবে দিতে হবে। কোরবানির মাংস, চামড়া, মাথা বা পা দিয়ে এর বিনিময় দেয়া যাবে না।
আরো পড়ুনঃ নামাজ পড়ার সমস্ত নিয়ম কানুন
আশা করছি তাহলে এতক্ষণে আপনি কোরবানি সম্পর্কে সমস্ত মাসআলা এবং নিয়মকানুন
গুলো সম্পূর্ণ বিস্তারিতভাবে জেনে গেছেন। এখন আপনি কোরবানি সম্পর্কে বিশেষভাবে
অবগত হয়ে গেছেন। কোরবানি নিয়ে কেউ যদি ভুল করে তাকে তার ভুল ধরিয়ে দিতে
পারবেন।
সর্বশেষকথা - কোরবানি করার সঠিক নিয়ম
প্রিয় পাঠক আপনি যে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ছিলেন সেই পোস্টটি ছিল কোরবানি করার সঠিক নিয়ম এবং কোরবানির পশু জবাই করার দোয়া সম্পর্কে। আশাকরি পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ার মাধ্যমে কোরবানি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়ে গেছেন। এখন আপনি সঠিক নিয়মে আপনার নিয়তকৃত পশু জবাই করতে পারবেন। কোরবানি সম্পর্কিত পোস্টটি আপনার কাছে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই পোষ্টের নিচে আপনার মন্তব্য জানিয়ে যাবেন।
কারণ আপনার একটি মন্তব্য আমাদের পোস্ট লেখার আগ্রহ কয়েক গুণ বাড়িয়ে
দেয়। এবং এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন কারন তারাও এই
পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে কোরবানি করা সঠিক নিয়ম এবং কোরবানি পশু জবাই করার দোয়া
সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবে। এছাড়াও এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট করতে চাইলে আমাদের
ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন ধন্যবাদ।
ড্রিম সেন্টার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url