ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর নিয়ম - বিয়ে পড়ানোর দোয়া
আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা কিভাবে ইসলামিক বিয়ে পড়ানো হয়। তাই আজকের পোস্টে থাকছে ইসলামিক বিয়ের পড়ানোর নিয়ম সম্পর্কে। এবং এ প্রশ্নের মধ্যে আরো আলোচনা করা হবে বিয়ে পড়ানোর দোয়া এবং বিয়ে সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য।
এছাড়াও এই পোষ্টের মধ্যে যৌতুক নিয়া হারাম কি হালাল এবং এর শাস্তি কি এই সম্পর্কেও আলোচনা করা হবে। তাই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে করুন এবং জানুন ইসলামিক বিয়ের এবং বিয়ে পড়ানোর দোয়া সম্পর্কে। তাই দেরি না করে চলুন আর্টিকেলটি পড়া শুরু করা যাক।
পোস্ট সূচীপত্রঃ ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর নিয়ম এবং বিয়ে পড়ানোর দোয়া
- ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর নিয়ম
- ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া
- ইসলামে কোথায় বিয়ে পড়ানো উত্তম
- সর্বশেষ পোষ্ট লেখক এর কিছু কথা
ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর নিয়ম
আমরা মুসলমানরা হয়তো অনেকেই জানি না কিভাবে ইসলামিক বিয়ের পড়ানো হয়। এখনকার সময়ের মানুষ ইসলামকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্য পন্থা অবলম্বন করে ছেলে মেয়ের বিয়ে দিয়ে থাকে। তবে এই সমস্ত বিয়ে গুলো কখনোই জায়েজ হয় না। এবং এই সমস্ত বিয়ে গুলা দীর্ঘস্থায়ী হয় না, সংসারে বহু ধরনের ঝামেলা লেগেই থাকে কারণ একটাই সুন্নত মোতাবেক বিয়ে না হওয়া। তাই প্রতিটি মুসলমানের কাজ হল ইসলামিক তরিকায় ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেয়া।
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের পর্দা করার উপকারিতা
আর আজকে আপনাদের এই সম্পর্কে আলোচনা করা হবে একটি ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর নিয়ম কানুন সম্পর্কে। পোষ্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন তাহলেই জানতে পারবেন কিভাবে ইসলামিক বিয়ে পড়ানো হয়। ইসলামিক বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রী বাবার কোণে মুখ্য। তাই ছেলেমেয়েদের বিয়ে দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই তাদের মতামত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেবেন। কখনোই তাদের অমতে জোর করে কোন কিছু করার চেষ্টা করবেন না। আবার যখন পাত্র-পাত্রী তাদের মতামত জানিয়ে দিবে তারপরে অবশ্যই সেই বিবাহটা সুন্নত সম্মত পদ্ধতিতে হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
বিবাহ যদি সুন্নত সম্মত না হয় তাহলে বর কনে বা পাত্র পাত্রী অনেক ধরনের সোয়াব ও
বরকত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে। ইসলামে বলা হয়েছে ছেলেমেয়েদের বিয়ে মসজিদে
এবং শুক্রবার দিন করা সবচেয়ে উত্তম। তবে এইদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন কোন
অবস্থাতেই ছেলে-মেয়ের অসম্মতিতে তাদের বিয়ে নিয়ে বাধ্য করা উচিত হবে না। এই
প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, "হে ঈমানদাররা' তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে তোমরা
বলপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হবে"। (সুরা নিসা আয়াতঃ ১৯)
এবং আবু সালমা রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত হয় যে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু
তাদের কাছে বর্ণনা করেন যে নবী করীম (সা.) বিবাহ সম্পর্কে বলেছেন, "কোন
বিধবা নারীকে তার সম্মতি ছাড়া বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারী নারীকে তার
অনুমতি ছাড়া বিয়ে দিতে পারবে না"। এর সাথে সাথে সাহাবারা জিজ্ঞেস করল, হে
আল্লাহর রাসুল' তাহলে কিভাবে তার অনুমতি নেয়া যাবে। এর উত্তরে আমাদের নবী
বলেন "তার চুপ থাকায় তার অনুমতি" (বুখারী, হাদিসঃ৫১৩৬)
কোন মসজিদে এবং শুক্রবারের দিন বিয়ে পড়ানো উত্তম এরপর বিয়ের কার্যক্রম শুরু করতে হবে। যিনি বিয়ে পড়াবেন তিনি বিবাহের খুতবা পাঠ করতে হয়। বিবাহের খুতবা পাঠ করার ক্ষেত্রে, প্রথমে নির্দিষ্ট কাঠামোতে হামদ এবং ছানা বা আল্লাহর প্রশংসা করবে। এরপর পবিত্র কোরআনের তিনটি আয়াত পাঠ করবে। যে আয়াতগুলো হলোঃ সূরা নিসা, আয়াত নাম্বার ১। আর সূরা আলে ইমরান, আয়াত নাম্বার ১০২ এবং সূরা আহযাব আয়াত নাম্বার ৭০-৭১। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিসঃ ২১১৮)
খুতবা পাঠ করা হয়ে গেলে মেয়ের অভিভাবক ছেলের সামনে বসে মেয়ের পরিচয় এবং
বিবাহের মোহরের পরিমাণ সম্পর্কে উল্লেখ করবেন। এবং তিনি বিবাহের প্রস্তাব পেশ
করবেন। অথবা তাদের অভিভাবকের কাছে অনুমতি নিয়ে যিনি বিয়ে পড়াবেন
(কাজী) তিনি বরের কাছে বিবাহের প্রস্তাব পেশ করবেন। আর এই প্রস্তাব পেশ
করাকে ইসলামে বলা হয় "ইজাব"।
বিবাহের জন্য অবশ্যই অভিভাবকদের অনুমতি নেওয়া জরুরী। আর বিশেষ করে মেয়ে পক্ষের
অভিভাবকদের অনুমতি নেওয়া একান্তভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং অবশ্যক। কারণ অভিভাবকের
অনুমতি ছাড়া কোন বিয়ে হয় না। এই প্রসঙ্গে নবী করীম (সা.) বলেন,
"অভিভাবক ছাড়া কোন বিয়ে নেই" (তিরমিজি হাদিসঃ ১১০১)
এরপর কাজী সাহেব সমস্ত মানুষ বা ধরা মজলিসের মাঝে পাত্রের উদ্দেশ্যে বলবেন,
মেয়ের পিতার নাম বলে মেয়ের হবু স্বামীর নাম বলে এবং মোহরানার পরিমাণ বলে
পাত্রকে কবুল বলতে বলা হবে। যেমনঃ মোঃ আকরামের মেয়ে আমিনাকে এক লক্ষ
টাকা মোহরানায় আপনার কাছে বিবাহ দিলাম, আপনি বলুন, "কবুল" অথবা "বলুন আমি
গ্রহণ করলাম"। এবং বিয়ে পড়ানোর সময় অবশ্যই দুইজন সাক্ষী থাকা অবশ্যক। এবং
দুইজন মানুষকে সাক্ষী রেখে পাত্র উচ্চস্বরে বলবে, "কবুল" অথবা "আমি গ্রহণ
করলাম" (অথবা বর যদি বোবা হয় তাহলে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে ইশারা বা লেখার
মাধ্যমেও বিবাহ সম্পন্ন করা যেতে পারে) এরূপভাবে তিনবার বলা উত্তম। (বুখারী,
হাদিসঃ ৯৫)
আরো পড়ুনঃ ইসলামিক বাসর রাত কেমন হয়
ইসলামী বিয়ে অনুসারে শুধু পাত্রকেই কবুল বলানো হয়। এবং পাত্রীর কাছ থেকে
পাত্রীর অভিভাবকরা শুধু অনুমতি নিয়ে আসবেন। এভাবেই ইসলামিক নিয়মে বিয়ে
পড়ানো সম্পন্ন হয়ে যাবে। এরপর বিয়ের মজলিসে উপস্থিত সবাই মিলে সুন্নতি দোয়া
পাঠ করতে হয়। আর এভাবেই ইসলামিক নিয়মে বিয়ে পড়ানো সম্পন্ন হয়ে যায়।
তাহলে আশা করছি এতক্ষণে জেনে গেছেন ইসলামিক বিয়ে করানোর নিয়ম সম্পর্কে
বিস্তারিত ধারনা।
ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া
এখন জানুন ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া। বিয়ে শেষ করে কোন দোয়া পাঠ করা হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন। কারণ বিয়ে শেষে নবদম্পতির বিবাহিত জীবন সুখের হওয়ার জন্য দোয়া পাঠ করতে হয়। যেই দোয়াটি আল্লাহতালা কবুল করে তাদের বিবাহিত জীবনে রহমত এবং বরকত নাযিল করে। তাই অবশ্যই প্রতিটি ইসলামিক বিয়েতে অথবা বিয়ের শেষ করে এই দোয়া পাঠ করা জরুরী। তাহলে চলুন জেনে নি কোন দোয়া পাঠ করে বিয়ে সমাপ্ত করা হয়। ইসলামিক বিয়ের পড়ানো দোয়াঃ
বাংলা উচ্চারণঃ "বা-রাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বা-রাকা আলাইকা, ওয়া জামাআ বায়নাকুমা ফী খায়ের"
বাংলা অনুবাদঃ "আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিন, তোমার ওপর বরকত দিন ও তোমাদের দুজনকে কল্যাণের সঙ্গে মিলিত করুন"। (তিরমিজি, হাদিস নাম্বারঃ ১০৯১)
আশা করছি তাহলে এতক্ষণে জেনে গেছেন ইসলামিক বিয়ে পড়ানো দোয়া সম্পর্কে
বিস্তারিত ধারণা। এখন আপনি বিয়ের সমাপ্ত করে এই দোয়া পাঠ করতে পারবেন।
ইসলামে কোথায় বিয়ে পড়ানো উত্তম
বিয়ে পড়ানোর জন্য অবশ্যই সঠিক জায়গা নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরী। কারণ যে কোন জায়গায় বিয়ে পড়ানো হলে সেই বিয়েই কোন বরকত আসে না। তাই অবশ্যই বিয়ে পড়ানোর আগে কোন জায়গায় বিয়ে পড়ানো হচ্ছে সেই জায়গাটা ভালোভাবে নির্বাচন করে নিতে হবে। তবে ইসলামিক নিয়মে বিয়ে পড়ানোর জন্য মসজিদ সবচেয়ে উত্তম জায়গা।
আরো পড়ুনঃ বিসমিল্লাহ বলার ফজিলত
কারণ মসজিদের মতো পবিত্র কোন স্থান নেই। তাই ওই স্থানে দিয়ে পড়ানো হলে তাদের বিবাহিত জীবন পবিত্রময় হয়ে থাকবে। তাই ইসলামে বলে প্রতিটি বিয়ে মসজিদে করানো সবচেয়ে উত্তম। তবে অন্য কোন জায়গায় করালে কোন ক্ষতি হয় না। তাহলে আশা করছি এতক্ষণে জেনে গেছেন ইসলামিক নিয়মে বিয়ে পড়ানোর জন্য বা ইসলামে বিয়ে কোথায় পড়ানো উত্তম সেই সম্পর্কে।
সর্বশেষ পোষ্ট লেখক এর কিছু কথা
এতক্ষণে আপনি ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়ে গেছেন। এমনকি বিয়ের জন্য কোন দোয়া ব্যবহার করা হয় এই সম্পর্কেও ধারণা পেয়ে গেছেন। এখন তাহলে ইসলামিক বিয়ের সম্পর্কে জানেনা তাদের জান সাহায্য করবেন। আমাদের এই পোস্টটি যদি আপনার কাছে একটু ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই পোষ্টের নিচে একটি মন্তব্য করে যাবেন।
কারণ আপনার একটি মন্তব্য আমাদের পোস্ট লেখার আগ্রহ কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে দেয়। এমনকি এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন কারণ তারাও এ পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে জানতে পারবে ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর নিয়ম এবং ইসলামিক বিয়ে পড়ানোর দোয়া সম্পর্কে। এছাড়াও এই সম্পর্কিত আরো পোস্ট করতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন ধন্যবাদ।
ড্রিম সেন্টার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url