ফরজ গোসলের নিয়ম - ফরজ গোসলের দোয়া
প্রিয় পাঠক, আপনারা অনেকেই ফরজ গোসল সম্পর্কে অবহেলিত। অনেকেই ফরজ গোসল করেন না। ফরজ গোসল না করলে আপনি কখনোই অপবিত্র থেকে পবিত্র হতে পারবেন না। পবিত্র হওয়ার জন্য ফরজ গোসলের নিয়ম - ফরজ গোসলের দোয়া রয়েছে। এই নিয়ম মেনে আপনি পবিত্র হতে পারবেন। তাই আজকে ফরজ গোসলের নিয়ম - ফরজ গোসলের দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন তাহলে শুরু করেন।
আপনি যদি সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়েন তাহলে আপনি সম্পূর্ণভাবে পবিত্র হওয়ার উপায় জানতে পারবেন। গোসলের নিয়ত দোয়া শাস্তি ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাই সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য বলা হলো। বেশি কথা না বলে চলুন শুরু করা যাক।
সূচিপত্রঃ ফরজ গোসলের নিয়ম - ফরজ গোসলের দোয়া
- ফরজ গোসলের নিয়ম
- ফরজ গোসলের দোয়া
- ফরজ গোসলের নিয়ত
- গোসলের ফরজ কয়টি
- ফরজ গোসল কখন করতে হয়
- ফরজ গোসল কেন করতে হয
- ফরজ গোসল না করার শাস্তি
- পোস্ট লেখকের মন্তব্য
ফরজ গোসলের নিয়ম
পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। পবিত্রতা অর্জন করার জন্য বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। যেমন
আপনি খাবার আগে হাত ধুয়ে পবিত্র হতে পারেন। নামাজ পড়ার জন্য অজু করে পবিত্র হতে
পারেন। আর পুরো শরীর পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করে পবিত্র হতে পারেন। তার মধ্যে
মহান রাব্বুল আলামিন গোসল কে ফরজ করেছেন কিছু কিছু ক্ষেত্রে। চলুন দেখিনি ফরজ
গোসলের নিয়ম সম্পর্কে।
যে কারণে গোসল ফরজ হয়ঃ
- উত্তেজনবশত বীর্যপাত বা স্বপ্নদোষ হলে।
- নারী-পুরুষ এর মিলনে(সহবাসে ভিডিও পাঠক বা না হোক)
- নারীদের হায়েয- নিফাশ শেষ হয়ে গেল।
- ইসলাম গ্রহণ করলে(নব মুসলিম হলে)
ফরজ গোসলের নিয়মঃ
১. ফরজ গোসলের জন্য মনে মনে নিয়ত করতে হবে।
২. তারপর দুই হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার করে ধৌত করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ওযু করার সঠিক নিয়ম
৩. এবারের কাজ হচ্ছে ডান হাত দিয়ে পানি নিয়ে বাম হাত দিয়ে সুন্দরভাবে লজ্জাস্থান সহ তার চারপাশেও ধুয়ে ফেলতে হবে। তাছাড়া শরীরের যেকোনো জায়গায় বীর্য লেগে থাকলে ওই স্থানে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
৪. বাম হাত সুন্দর করে ধুয়ে ফেলতে হয়।
৫. এবার বিসমিল্লাহ বলে ওযুর নিয়মে অজু করতে হবে।
৬. অজু শেষে মাথায় তিনবার পানি ঢেলে চুলের গোড়া ভিজিয়ে সুন্দরভাবে খিলাল করে নিতে হবে যেন মাথার সব জায়গায় ভালোভাবে পানি বোঝা।
৭. এবার সমস্ত শরীর ধুয়ে ফেলতে হবে। তার জন্য ডান পাশে তিনবার ও বাম পাশে তিনবার পানি ঢেলে সুন্দর ভাবে ধৌত করতে হবে। এবার পুরো শরীর পানি ঢেলে ধুয়ে ফেলতে হবে। এমন ভাবে ধৌত করতে হবে যেন শরীরে কোন অংশ ভিজতে বাকি না থাকে। সতর্কতার জন্য আরো একবার পুরো শরীর পানি ঢেলে ধুয়ে ফেলতে হবে যেন কোন জায়গা বাদ না থাকে।
৮. সবশেষে একটু সরে গিয়ে অন্য জায়গায় দুই পা তিনবার ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।
তাছাড়া পুরুষের যদি দাঁড়িয়ে থাকে তাহলে দাড়ি ও মাথার চুল এবং মহিলাদের চুল
সুন্দরভাবে ভিজতে হবে। মেয়েদের খোপা না খুললেও হবে। আপনি যদি এ নিয়মে গোসল করেন
তাহলে অজু করার দরকার নেই।
ফরজ গোসলের দোয়া
পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। বিভিন্নভাবেই পবিত্র হওয়া যায়। তার মধ্যে হচ্ছে গোসল। সব ভালো কাজ করার আগে মহান আল্লাহতালা আমাদের কে তার শুকরিয়া আদায় করার কথা বলেছেন। যেমন সকল ভাল কাজ করার আগে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতে হয়। তেমনি সকল কাজ করার আগে কিছু দোয়া রয়েছে। আর এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহতালার কাছে প্রার্থনা করা হয়। আজকে ফরজ গোসলের দোয়া সম্পর্কে বলতে চলেছি।
আমরা অকারনে-কারণে, প্রয়োজনীয়-প্রয়োজনে প্রতিদিন গোসল করে থাকি। আর সেই গোসল
যদি পবিত্রতা অর্জনের জন্য হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানতে হয়। আপনি যদি
নিয়ম না মেনে গোসল করেন সে ক্ষেত্রে আপনি পবিত্র হতে পারবেন না। তাই সর্বপ্রথম
আপনাদেরকে নিয়মগুলোর মধ্যে ফরজ গোসলের দোয়া সম্পর্কে বলব। চলুন তাহলে জেনে
নিন
ফরজ গোসলের দোয়াঃ নাওয়াই তুয়ান গোছলা লীরাফিল জানাবা-তি।
আপনি ফরজ গোসলের সময় এই দোয়া পাঠ করে গোসল করবেন। তাহলে আপনার গোসলটি সম্পূর্ণ
হবে এবং আপনি পবিত্রতার জন্য একটি ধাবতিক্রম করবেন। চলুন এবার ফরজ গোসলের নিয়ত
সম্পর্কে জেনে নিই।
ফরজ গোসলের নিয়ত
যেকোনো ভালো কাজের জন্য সর্বপ্রথম নিয়ত করা প্রয়োজন। আপনি যদি কোন ভালো কাজের জন্য নিয়ত করেন, সে ক্ষেত্রে ভাল কাজ ঠিক করার আগে নিয়ত করলে আপনি নেকি লাভ করবেন। তাই অবশ্যই সকল ভাল কাজ করার আগে নিয়ত করতে হবে। তাই আমি আজকে ফরজ গোসলের নিয়ত সম্পর্কে বলতে চলেছে।
আরো পড়ুনঃ নামাজ পড়ার নিয়ম
ফরজ গোসলের নিয়তঃ "নাওয়াইতুল গুছলা লিরাফইল জানাবাতি"
অর্থঃ (আমি নাপাকি থেকে পাক হওয়ার জন্য গোসল করছি)
গোসলের ফরজ কয়টি
যেহেতু আপনাদের মাঝে ফরজ গোসলের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করছি। সে ক্ষেত্রে আপনাদের
জেনে নেওয়া উচিত গোসলের ফরজ কয়টি ও কি কি। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক গোসলের
ফরজ কয়টি ও কি কি।
গোসলের ফরজ তিনটিঃ
১. একবার গরগরা সহ কুলি করা।
২. একবার নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি দিয়ে পরিষ্কার করা।
৩. পুরো শরীরে পানি ঢেলে ভালোভাবে ধোয়া।
উপরের তিনটি ফরজ না করলে আপনার গোসল ফরজ হবে না। তাই অবশ্যই অবশ্যই উপরের তিনটি
ফরজ কাজ করে গোসল করবেন। এক্ষেত্রে আপনি পবিত্র দেওয়ার জন্য করতে পারবেন।
ফরজ গোসল কখন করতে হয়
উত্তেজনবশত বীর্যপাত বা স্বপ্নদোষ হলে। নারী-পুরুষ এর মিলনে (সহবাসে ভিডিও পাঠক বা না হোক) নারীদের হায়েয- নিফাশ শেষ হয়ে গেল।ইসলাম গ্রহণ করলে(নব মুসলিম হলে)। এসব কারণগুলো যদি আপনার দ্বারা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে গোসল আপনার জন্য ফরজ হয়ে যাবে। এজন্য আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আপনি যদি রাতে সহবাস করলেন তাহলে ভরে ফজরের নামাজের আগে এবং যদি দিনে সহবাস করেন সে ক্ষেত্রে পরবর্তী নামাজের আগে ফরজ গোসল করে ফেলতে হবে।
ফরজ গোসল কেন করতে হয়
- উত্তেজনবশত বীর্যপাত বা স্বপ্নদোষ হলে।
- নারী-পুরুষ এর মিলনে(সহবাসে ভিডিও পাঠক বা না হোক)
- নারীদের হায়েয- নিফাশ শেষ হয়ে গেল।
- ইসলাম গ্রহণ করলে(নব মুসলিম হলে)
উপরের বিষয়গুলো যদি আপনার দ্বারা হয়ে থাকে বা করে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনাকে
পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করতে হবে। আর উপরোক্ত কারণগুলোর জন্য আপনার উপর গোসল
ফরজ হয়ে যাবে। তাই উপরোক্ত কারণগুলোর জন্য ফরজ গোসল করতে হয়।
ফরজ গোসল না করার শাস্তি
এখন আমরা আলোচনা করব ফরজ গোসল না করার শাস্তি সম্পর্কে। আমরা প্রতিদিন জীবনে বিভিন্ন কারণে অপবিত্র হয়ে পড়ি। অপবিত্র থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য আল্লাহ আমাদের প্রতি গোসল ফরজ করে দিয়েছেন। আমরা যদি অপবিত্র হয়ে যায় এক্ষেত্রে পবিত্র হওয়ার কোন বিকল্প নেই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফরজ গোসলের মাধ্যমে পবিত্র হয়ে যেতে হবে।
আমরা যদি ফরজ গোসল না করি অবহেলা করি সে ক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে মৃত্যুর পর জবাবদিহি করতে হবে। এক্ষেত্রে ফরজ গোসলের নিয়ম - ফরজ গোসলের দোয়া মেনে ফরজ গোসল করতে হয়। তাহলে আপনি সম্পূর্ণভাবে পবিত্র হতে পারবেন। তাই পবিত্র হওয়ার জন্য ফরজ গোসল করতে হবে। ফরজ গোসল না করলে আপনি কোনভাবেই পবিত্র হতে পারবেন না। আপনার কোন ইবাদত কাজে দিবে না। আপনার কোন ইবাদত হবেনা, যেমন নামাজ, রোজা হজ্ব, তাওয়াফ, করার স্পর্শ করে করা ইত্যাদি সকল ইবাদত হবে না।
আরো পড়ুনঃ কোরআন তেলোয়াতের ফজিল
আর আপনি যদি অপবিত্র অবস্থায় সারা জীবন ইবাদত বন্দেগী করে যান সে ক্ষেত্রে আপনি
কোন নেকী লাভ করতে পারবেন না। এই ফরজ গোসল না করার শাস্তি খুবই ভয়াবহ। আপনি ফরজ
গোসল না করে আল্লাহতালার কোন ইবাদত করতে পারবেন না সে ক্ষেত্রে আপনি আপনার ঈমান
হারিয়ে ফেলবেন। এজন্য আল্লাহতালা অনেক বড় শাস্তি দিতে পারে। তাছাড়া সর্বপ্রথম
কবরে আপনি তিন ধরনের শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন।
- কবর খুব সংকীর্ণ হয়ে যাবে যার ফলে এক পাঁজরের হাড় অন্য পাজরে ঢুকে যাবে।
- কবরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হবে
- কবরের মধ্যে আল্লাহ সাপ নিযুক্ত করে দেবেন, তারা আপনাকে বারবার ছোবল বা দংশন করতে থাকবে।
সুতরাং যে কারণগুলোর জন্য আপনার আমার ওপর গোসল ফরজ হয়ে যাবে এ কারণগুলো যদি
আপনার সাথে ঘটে যত সম্ভব ফরজ গোসল সেরে ফেলতে হবে। যেহেতু ফরজ গোসল না করলে ইবাদত
হয় না তাই নামাজের আগেই গোসল সেরে ফেলতে হবে।
পোস্ট লেখকের মন্তব্য
আজকে আমি আপনাদের মাঝে ফরজ গোসলের নিয়ম - ফরজ গোসলের দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তাছাড়া আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনাগুলো এমন ভাবে করা হয়েছে যেন একটার পর একটা আপনার প্রয়োজনে আসে। আশা করি আপনি বিষয়গুলো বুঝতে পেরেছেন। যদি কোন কিছু না বুঝে থাকেন সেই ক্ষেত্রে কমেন্ট করে জানিয়ে দিতে পারেন। সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আসসালামু আলাইকুম।
ড্রিম সেন্টার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url