কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা - কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
মানুষের শরীরে কিসমিসের উপকারিতা অনেক। আর তাই আজকের পোস্টটি এই কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে লেখা হয়েছে। পোষ্টির মধ্যে কিসমিস সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য উপস্থাপন করা হবে। তাই মনোযোগ সহকারে পোস্টটি পড়ুন এবং জানুন কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
এছাড়াও এই পোস্টটির মধ্যে কিসমিস কিভাবে খেতে হয় এবং এর উপকারিতা অপকারিতা সব ধরনের ব্যাপার নিয়ে আলাপ আলোচনা করা হবে। এমনকি পোষ্টের মধ্যে কিসমিস খাওয়ার সব ধরনের নিয়ম-কানুন বলে দেয়া হবে। আপনি যদি এই নিয়ম অনুযায়ী কিসমিস রেগুলার খেতে পারেন তাহলে আপনার অনেক উপকার হবে আশা করছি। তাই দেরি না করে চলুন আর্টিকেলটি পড়া শুরু করা যাক এবং জানা যাক কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।
পেজ আলোচনা কৃত সূচিপত্রঃ কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
- কিসমিস কি এবং কাকে বলে
- কিসমিস কিভাবে তৈরি হয়
- কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
- কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
- কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা
- কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
- কিসমিসে কত ক্যালরি থাকে
- কিসমিস খেলে ওজন বাড়ে না কমে
- কিসমিস খেলে ডাইবেটিস বাড়ে না কমে
- কিসমিসের দাম ২০২৩
কিসমিস কি এবং কাকে বলে
কিসমিস হলো শুকনো আঙ্গুর। এই কিসমিস কে ইংরেজিতে রেইসিনও বলা হয়ে থাকে। এই
কিসমিস পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদন করা হয়ে থাকে। এই ফলটি প্রাচীনকাল
থেকেই শক্তি ও ক্যালরির মত উৎস হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে আমাদের শরীরে
জন্য। এই কিসমিস ফলটি সরাসরিও খাওয়া যায় আবার রান্নার সময় মসলা বা উপকারণ
হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। আশা করি কিসমিস কি এবং কাকে বলে এই সম্পর্কে
বিস্তারিত তথ্য পেয়ে গেছে।
কিসমিস কিভাবে তৈরি হয়
কিসমিস তৈরি করা হয় আঙ্গুর থেকে। এই কিসমিস উপকরণটি তৈরি করা হয় সূর্যের
তাপ অথবা মাইক্রোওভেনের সাহায্যে। এমনকি তাপের ফরুক্টোজ গুলো জমাট বেঁধে পরিণত
হয় কিসমিস নামক এই ফলটি। আর এই পদ্ধতি অবলম্বন করেই আঙ্গুরকে শুকিয়ে তৈরি
করা হয় মিষ্টি স্বাদের কিসমিস। কিসমিস কিভাবে তৈরি হয় এতটুকু পড়ার মাধ্যমে আশা
করি জেনে ফেলেছেন।
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা
এতক্ষণ জানলেন কিসমিস কি এবং এই কিসমিস কিভাবে তৈরি করতে হয় এখন জানবেন এই
কিসমিস খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায় বা কিসমিস খাওয়ার
উপকারিতা। এই কিসমিস নামক উপকরণ এর মাধ্যমে শরীরের আয়রনের ঘাটতি পূরণ
করার পাশাপাশি রক্তের লাল কণিকার পরিমাণ বাড়াই। এমনকি এই কিসমিস ভিজিয়ে খেলে
আরো বেশি উপকার পাওয়া যায় এটি পরের প্যারায় আলোচনা করা হয়।
আরো পড়ুনঃ খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
এছাড়াও এই কিসমিসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, এই ফাইবারের মাধ্যমে
দেহের পরিপাক ক্রিয়া দ্রুত হতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাও দূর করে
থাকে এই কিসমিস নামক উপকরণ বা ফলটি। এমনকি এই শুকনো কিসমিস ফলটির মধ্যে
রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। যা আপনার হারকে মজবুত করতে বেশ ভূমিকা
পালন করে থাকে। আপনি যদি প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস করে ফেলেন তাহলে
আপনার হাড়ের ক্ষয় এবং বাতের ব্যথা থেকে দূরে রাখবে।
অনেকেই এই কিসমিস কে ফলের রাজা বলে থাকে। কারণ এই ফলটি দ্বারা মানুষের শরীরের বিভিন্ন ধরনের উপকার করা যায়। এই ফলটি ডাক্তারেরও পরামর্শের একটি ওষুধ। এছাড়াও এই কিসমিস রান্নার কাজেও মসলা বা উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সেমাই এবং পায়েস রান্না করা হয় এই কিসমিস নামক উপকরণটি ব্যবহার করে। এতোটুকু পড়ার মাধ্যমে আশা করি কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পেয়ে গেছেন।
কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা
এতক্ষণ জানলেন শুকনো কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। এবার জানবেন সেই
কিসমিসকেই ভিজিয়ে খেলে কি কি উপকার পাওয়া যায়। কিসমিস পানিতে ভিজিয়ে খেলে অনেক
ধরনের উপকার পাওয়া যায়। যেমন কিসমিস পানিতে ভেজানো পানি খেলে মানুষের
দেহের রক্ত পরিষ্কার করে। আশা করি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন।
এমনকি আপনি যদি প্রতিদিন কিশমিশ ভেজানো পানি খান তাহলে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য
এসিডিটি থেকে মুক্তি পাবেন কোন ওষুধ ছাড়াই। এছাড়াও এই কিসমিস ফলটি আপনার
হৃদয়কে ভালো রাখে এবং নিয়ন্ত্রণ রাখে কোলেস্টেরল। এই কিসমিসের মধ্যে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পাওয়া যায় এবং আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
যা সহজে রোগ থেকে মুক্তির কারণ। আবার এই ভেজানো কিসমিসের মধ্যে রয়েছে
ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম আয়রন ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার। ভেজানো কিসমিস খেলে
কয়েকটি উপকারের কথা উল্লেখ করা হলো।
- ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ রাখে
- রক্তস্বল্পতা কমায়
- হজম শক্তি বাড়ায়
- দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- বিষম মুক্ত শরীর তৈরি করে
- কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়
- যৌন শক্তি বাড়ায়
- নিরাপদ ওজন বৃদ্ধি করে
- ক্যান্সার নিরাময়
- হাড়ের বৃদ্ধি
- মস্তিষ্কের উন্নতি ও প্রশান্তি
- ডায়াবেটিস ও ওবেসিটি প্রতিরোধ
- দাঁত ও মাড়ির সুরক্ষা
- দৃষ্টিশক্তির উন্নতি
- জ্বরের নিরাময়
- ইনফেকশন জনিত সমস্যা প্রতিরোধ
- কোলেস্টেরল প্রতিরোধ
- এসিডোসিস নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি
কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা
এতক্ষণ আলোচনা করা হলো কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। এবার জেনে নিন কিসমিস খাওয়ার মাধ্যমে কি কি অপকার বা ক্ষতি হতে পারে আপনার দেহের। আপনাদের মধ্যে যাদের অ্যালার্জি আছে বা অ্যালার্জিজনিত সমস্যা আছে তারা ভুলেও কিসমিস খাবেন না কারণ এই কিসমিস এলার্জির সমস্যা বাড়াতে পারে।
আরো পড়ুনঃ কলা খাওয়ার উপকারিতা
এছাড়াও আরেকটি ক্ষতিকর দিক হলো কিসমিস খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়। তাই যারা মোটা বা ওজন অনেক বেশি তারা কিসমিস খাবেন না কারণ কিসমিস খাওয়ার মাধ্যমে আপনার ওজন আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। আশা করি কিসমিস খাওয়ার ক্ষতিকারক দিকগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে গেছেন।
কিসমিস খাওয়ার নিয়ম
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আশা করি সম্পূর্ণ ধারণা পেয়ে গেছেন। এবার
জানান কিসমিস খাওয়ার সঠিক সময় কোনটি। আপনি চাইলে সারারাত কিসমিস একটি
পাত্রে পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিয়ে সকালে খালি পেটে পানি সহ কিসমিস খেতে
পারেন। এই ভেজানো কিসমিসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ক্যালসিয়াম
পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম আয়রন এবং ফাইবার। আশা করি কিসমিস খাওয়ার সঠিক
সময়টা কখন তা জানতে পেরেছেন।
কিসমিসে কত ক্যালরি থাকে
গবেষণায় পাওয়া গেছে ১০০ গ্রাম কিসমিসে ২৯৯ ক্যালোরির শক্তি রয়েছে। এছাড়াও ক্যালরি বাদে যে সমস্ত উপাদান গুলো পাওয়া গেছে সেগুলো হল।
আরো পড়ুনঃ কোন ফলে কি উপকার জানুন
- কার্বোহাইড্রেট.৮৯.১৮ গ্রাম
- প্রোটিন ৩.০৭ গ্রাম
- ফ্যাট ০. ৪৬ গ্রাম
- খাদ্যআস ৩.০৭ গ্রাম
- ফোলেট ৫ মাইক্রোগ্রাম
- নিয়াসিন ০. ৭৬৬ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম ৭৪৯ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম ৫০ মিলিগ্রাম
- লৌহ ১. 88 মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম ২৯৯ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস ১০১ মিলিগ্রাম
কিসমিস খেলে ওজন বাড়ে না কমে
কিসমিস খেলে ওজন বৃদ্ধি পাই এটা গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত। কিসমিস ওজন
বাড়ানোর জন্য বেশ কার্যকরী একটি ফল। ওজন বাড়ানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি
গ্রহণ করতে হয় আর এই ক্যালোরি কিসমিসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া
যায়। গবেষণায় দেখা গেছে ১০০ গ্রাম কিসমিসে ২৯৯ ক্যালোরি রয়েছে। যা
আপনার দৈহিক ক্যালরি গ্রহণের ১৫%। এই উদাহরণটি জার্নাল ফর ফুড এন্ড
নিউট্রিশন রিসার্চ দ্বারা প্রকাশিত। আশা করি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন।
কিসমিস খেলে ডাইবেটিস বাড়ে না কমে
কিসমিস খাওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে। ডায়াবেটিসের জন্য
কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা অনেক। এটি খেলে রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
এটি একটি স্বাস্থ্যকর শুকনো ফল যা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ রয়েছে। ডায়াবেটিস
রোগীদের জন্য কিসমিস খাওয়ার একটি মাত্রা আছে সেই মাত্রা অনুযায়ী খাওয়া উচিত।
তাহলে ডায়াবেটিস সব সময় নিয়ন্ত্রণে থাকে। আশা করি ব্যাপারটা বুঝতে
পেরেছেন।
আপনি যদি না জেনে থাকেন ২০২৩ সালে কিসমিসের দাম কত তাহলে। বাজারে গিয়ে কিসমিস
কিনতে পারবেন তাই আগে দাম জেনে নিন তারপরে বাজারে গিয়ে যাচাই
করুন। বর্তমানে কিসমিস ১০০ টাকায় ২৫০ গ্রাম পাওয়া যায়। মানে ৪০০
টাকা প্রতি কেজির দাম। ২০২৩ সালের কিসমিসের দাম সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়ে
গেছেন।
ড্রিম সেন্টার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url