লাইলাতুল কদরের রাতে কি কি করনীয় বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন

আমরা সবাই জানি রমজান মাসে একটি রাত আসে সেই রাতটি হল লাইলাতুল কদরের রাত। কিন্তু এটা জানি না এই লাইলাতুল কদরের রাতে কি কি করনীয় আছে আমাদের। আজ সেই সম্পর্কেই আমাদের এই পোস্টটি। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে লাইলাতুল কদরের রাতে কি কি করনীয় বিস্তারিত জানতে পারবেন।

lailatul kodor

এছাড়াও এই আর্টিকেল এর মধ্যে কদরের রাত সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করা হবে। আপনি যদি না জেনে থাকেন লাইলাতুল কদরের রাতে কি কি করনীয় এবং লাইলাতুর কদরের রাত কোন দিন হয় তাহলে এই পোস্টটি পড়ে জেনে নিন। তাই দেরি না করে চলুন আর্টিকেলটি পড়া শুরু করা যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ লাইলাতুল কদরের রাতে কি কি করনীয়

লাইলাতুল কদর কবে

পৃথিবীতে এমনও অনেক মুসলমান আছে যারা কিনা জানে না লাইলাতুল কদর বা শবে কদর এর রাত কবে হয়। এমন কিছু সংখ্যক মুসলমানদের জানানোর জন্য আজকের পোস্টটি লেখা হয়েছে। আরবি বছরের রমজান মাসে ৩০ টি রোজার মধ্যে শেষ দশ রোজার বা নাজাতের দশ দিন এর মধ্যে বিজোড় সংখ্যক যে রোজার রাতগুলো আছে সেই রাতগুলোর মধ্যে যেকোনো একটি রাত লাইলাতুল কদরের রাত। 

আরো পড়ুনঃ তারাবির নামাজ সম্পর্কিত তথ্য

তবে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মতে, বিজোড় সংখ্যক রাতের মধ্যে ২৬ তম রোজা শেষের পর যে রাতটি আসে বা (২৭ নাম্বার রোজা) সেই রাতকে লাইলাতুল কদর হিসেবে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন। এক কথায় বলা যায় যেই রাতে কুরআন মাজীদ নাযিল হয়েছে সেই রাতকেই লাইলাতুল কদরের রাত বলা হয়। আশা করি লাইলাতুল কদরের রাত কবে সেই সম্পর্কে একটি মোটামুটি ধারণা পেয়ে গেছেন।

লাইলাতুল কদর এর ফজিলত

লাইলাতুল কদরের রাত পুরো এক বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ একটি রাত। এই রাতে আল্লাহ তা'আলা কোরআন মাজীদ নাযিল করে এই রাতের গুরুত্ব আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন মুসলমানদের জন্য। প্রতিটি মুসলমানের কাছে এর একটি পাওয়া ভাগ্যের বা স্বপ্নের মত। এই রাতকে বলা হয় ভাগ্য পরিবর্তনের রাত। এই রাতে আল্লাহর কাছে চাইতে দেরি কিন্তু পেতে দেরি নয়।  আল্লাহতায়ালা বলেন: "নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনীতে"।

আর এই মর্যাদাপূর্ণ রাতে আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ তায়ালা ফিরিয়ে দিতে জানেন না। অবশ্যই তিনি তার গুনা মাফ করে দিবেন। এই লাইলাতুল কদরের রাতের অনেক ফজিলত আল্লাহ তায়ালা এই রাতকে সারা বছর এর শ্রেষ্ঠতম রাত হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এই রাতে ক্ষমা চাইলেই ক্ষমা পাওয়া যায়। আবার লাইলাতুল কদরের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে জানা গেছে হজরত জিবরাইল (আ.) একদল ফেরেশতা নিয়ে পৃথিবীতে আসেন এবং লাইলাতুল কদরের রাতে যে সমস্ত নারী-পুরুষ আল্লাহর এবাদতে মগ্ন থাকে তাদের জন্য দোয়া করেন।

লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস

এই ২৭তম রাত লাইলাতুল কদরের রাত নিয়ে আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে কিছু হাদিস আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করা হলো।

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত মুহাম্মদ ( সা.) বলেন, "যদি তোমরা কবরকে আলোকময় পেতে চাও তাহলে লাইলাতুল কদরে জাগ্রত থেকে ইবাদত কর"।

আবার হযরত মুহাম্মদ ( সা.) থেকে বর্ণিত, "যদি কেউ ঈমানের সঙ্গে সওয়াব লাভের খাঁটি নিয়তে লাইলাতুল কদর কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদের অতিবাহিত করে তবে তার পরবর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে"।

আরেকটি হাদিসে বর্ণিত আছে হযরত মুহাম্মদ ( সা.) বলেন, " রমজানে শেষ দশ দিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর"।


হযরত মুহাম্মদ( সা.) এরশাদ করেন, " শবেকদর কে নির্দিষ্ট না করার কারণ হচ্ছে যাতে বান্দারা কেবল একটি রাত জাগরণ ও কিয়াম করেই যেন ক্ষ্যান্ত না হয়ে যায় এবং সেই রাতের ফজিলতের ওপর নির্ভর করে অন্য রাতের ইবাদত ত্যাগ করে না বসে তাই বান্দার উচিত শেষ দশকের কোন রাতকে কম গুরুত্ব না দেয়া এবং পুরোটাই ইবাদতের মাধ্যমে হবে কদর অম্বেষণ করা"

আশা করি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কয়েকটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে গেছেন।

লাইলাতুল কদরের নামাজের নিয়ম

এই লাইলাতুল কদরের রাতে বিশেষভাবে কোন নামাজ বা পদ্ধতি উল্লেখ করা নাই। লাইলাতুল কদরের রাতে দুই রাকাত দুই রাকাত করে নফল নামাজ মনোযোগ সহকারে এবং আত্মা শুদ্ধি করে আদায় করতে হবে। নামাজটি যেন অনেকক্ষণ ধরে বড় কেরাত পাঠ করে নামাজ পড়া হয়। লাইলাতুল কদরের নামাজ সম্পর্কে সেরকম কোন ধরা বাধা নেই আপনি দুই রাকাত দুই রাকাত করে যত খুশি নামাজ পড়তে পারেন।

তবে সেই নামাজ হওয়া লাগবে সহিসুদ্ধ ভাবে। লাইলাতুল কদরের রাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করতে পারেন দোয়া পড়তে পারেন আবার ইস্তেগফার ও তওবাও করতে পারেন এতে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল অনেক খুশি হয়। লাইলাতুল কদরের রাতে মনকে শুদ্ধি করে আল্লাহ তাআলার কাছে যা চাইবেন আল্লাহ তাআলা আপনাকে তাই দেবে।

লাইলাতুল কদরের আমল

লাইলাতুল কদরের রাতের কি কি করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই যে বিষয়টা সামনে আসে সে বিষয়টি হলো লাইলাতুল কদর এর আমল। এখন লাইলাতুল কদরের আমল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। লাইলাতুল কদরের রাত সারা বছরের শ্রেষ্ঠতম একটি রাত। এই রাতে আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদ নাযিল করেছিল। তাই রাতের গুরুত্ব অনেক।

লাইলাতুল কদরের রাত জাগা মানে শুধু রাত জেগে বসে থাকা নয়। সারারাত আল্লাহর ইবাদতে ব্যস্ত থাকা এমনটাই হাদীসে বর্ণিত করা আছে। সমস্ত রাত জুড়ে শুধু আল্লাহ তাআলার ইবাদত করতে হবে, নামাজ আদায় করতে হবে, কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে, জিকির আজগার করতে হবে, আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করতে হবে। তাহলেই রাত জাগা সম্পন্ন হবে।

আরো পড়ুনঃ লাইলাতুল কদরের রাতে কোরআন তেলাওয়াত করার ফজিলত 

আপনি যদি মনে করেন রাত জাগবো তাহলে আপনি ২১ তম ২৩ তম ২৫ তম ২৭ তম ২৯ তম রজনীর রোজার রাতগুলো লাইলাতুল কদরের রাত খুঁজতে পারেন। নবীগণ এই সমস্ত রাতগুলোর কথাই উল্লেখ করে গেছেন। এই রাত গুনাহ মাফের রাত, এই রাত ভালো কাজের সাথে লিপ্ত থাকার রাত, এই রাত আল্লাহতালার ইবাদত করে পার করার রাত। তাই এ রাতের সবাই কদর করতে শিখুন এবং লাইলাতুল কদরের রাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা নিয়ে নিন। আশা করি লাইলাতুল কদরের রাতে কি কি করনীয় এবং লাইলাতুল কদরের আমল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়ে গেছেন।

লাইলাতুল কদর সূরা অর্থসহ

এতক্ষণ লাইলাতুল কদরের রাতে কি কি করনীয় জানলেন এবার জানবেন লাইলাতুল কদর সূরাটির এবং এর বাংলা উচ্চারণ এবং বাংলা অনুবাদ সম্পর্কে। লাইলাতুল কদর সূরার আরবিঃ

إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ وَمَا أَدْرَاكَ مَا لَيْلَةُ الْقَدْرِ لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ تَنَزَّلُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ فِيهَا بِإِذْنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمْرٍ سَلَامٌ هِيَ حَتَّى مَطْلَعِ الْفَجْرِ

বাংলা উচ্চারণঃ "ইন্নাআনঝালনা-হু ফী লাইলাতিল কাদর। ওয়ামাআদরা-কা-মা-লাইলাতুল কাদর। লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর। তানাঝঝালুল মালাইকাতুওয়াররুহু ফীহা-বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমর। ছালা-মুন হিয়া হাত্তা-মাতলা’ইল ফাজর"।

বাংলা অনুবাদঃ আমি একে নাযিল করেছি  শবে-কদরে।শবে-কদর সমন্ধে আপনি কি জানেন? শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

পোস্ট সম্পর্কে লেখকের মন্তব্য

এতক্ষণ যে পোস্টটি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়ছিলেন সেই পোস্টটি হল লাইলাতুল কদরের রাতে কি কি করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা। উপরোক্ত পোষ্টের মাধ্যমে লাইলাতুল কদর নিয়ে যত প্রশ্ন আছে প্রায় সমস্ত প্রশ্নর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি উপরের পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে লাইলাতুল কদরের রাতে কি কি করনীয় জেনে গেছেন। পোস্টটি যদি আপনার কাছে ভালো লেগে থাকে তাহলে এই পোস্টটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে পারেন তাহলে তারাও উপকৃত হবে। এমন আরো আপনার অজানা তথ্যগুলো জানার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন। ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

ড্রিম সেন্টার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url