হাঁস পালনের পদ্ধতি - হাঁসের জাত সমূহ
হাঁস পালন বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় কৃষি খাত। বাংলাদেশের অনেক মানুষ হাঁস পালনকে জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। গ্রাম অঞ্চলে হাঁস পালনের অধিক সংখ্যক লোক দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলের মেয়েরা হাঁস পালন করে তার ডিম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
বর্তমানে দেশে প্রচুর হাস পালনের খামার গড়ে উঠেছে। খামারিরা হাঁস পালন করছে ডিম থেকে বাচ্চা তোলার আশায় এবং কেউ আবার ডিম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করার আশায় আবার কেউ হাঁসের মাংসের আসায়। হাঁস সাধারণত ডিম উৎপাদনের জন্য পালন করা হলেও মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। আর এই হাঁস সম্পর্কে আপনাদের মাঝে কিছু তথ্য উপস্থাপন করছি।সূচিপত্রঃ হাঁস পালনের পদ্ধতি গুলো কি কি
হাঁসের জাত সমূহ
বাংলাদেশের খামারিরা প্রায় অনেক জাতের হাঁস চাষ করে থাকে। পৃথিবীতে অনেক জাতের হাঁস থাকলেও আমাদের দেশে প্রায় কয়েকটি জাতের হাঁস পরিলক্ষিত হয়। তার মধ্যে মানুষ যেগুলা বেশি চিনে, সেগুলো হলোঃ রাজ হাঁস আর পাতি হাঁস ইত্যাদি। এমন অনেক ধরনের জাত আছে যা আমাদের জানা নাই, সেগুলো সম্পর্কে জেনে নিনঃ
- ডিম উৎপাদনকারী হাঁস
- মাংস উৎপাদনকারী হাঁস
- সৌন্দর্য প্রদর্শনকারী হাঁস
- খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস
- ইন্ডিয়ান রানার জাতের হাঁস
- জিনডিং জাতের হাঁস
- সাধারণ হাঁস বা দেশি হাঁস (যেটা কোন জাত নয়)
- পিকিন বা বেইজিং জাতের হাঁস
- মাসকোভি জাতের হাঁস
- আইলেসবারি জাতের হাঁস
- রোয়েন জাতের হাঁস ইত্যাদি।
হাঁস পালনের পদ্ধতি
হাঁস পালনের জন্য প্রথমে একটা ভালো মানের খামার তৈরি করতে হবে। হাঁস পালনের জন্য প্রতিটি হাঁসের জন্য ১০ বর্গফুট হিসেবে পাঁচ হাজার বর্গফুট জায়গা করতে হবে। ওয়াটার চ্যানেলের গভীরতা ৯, প্রস্থ ২০ ইঞ্চি রাখতে হবে। ছয় মাস পর্যন্ত প্রতিটি হাঁস পালন করার জন্য ১৫ কেজি খাবার দরকার হবে।
৬ মাস পর প্রতিটি হাসির জন্য দৈনিক ১৬০ গ্রাম খাবার লাগবে। হাঁস পালনের জন্য বেড়া দিয়ে একটি পুকুর তৈরি করতে হবে। পুকুরে হাঁসের জন্য পরিমাণমতো খাবার রাখতে হবে। এবং হাঁসের খামারে কোন ধরনের জীবজন্তু জাতে ঢুকতে না পারে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। হাঁস কে সময় মত খাবার দিতে হবে তাহলে তারা সময় মতো ডিম দিবে।
হাঁসের বাচ্চা পালনের পদ্ধতি
হাঁসের বাচ্চা পালনের পদ্ধতি গুলো হলো, আধা ঘন্টা পর পর হাঁসের বাচ্চাকে খাদ্য দিতে হবে। খাবার হিসেবে মুড়ি অথবা চিড়া ভিজিয়ে নরম করে মেঝেতে ছিটিয়ে দিতে হবে, প্রথম ২ দিন পর্যন্ত। এরপর থেকে এক মাস বয়স পর্যন্ত বাচ্চাকে শুধুমাত্র বয়লারের স্টার্টার প্লেট বা ফিড পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। কারণ হাঁসের বাচ্চা শুকনো খাবার খেতে পারে না।
আরো পড়ুনঃ হাঁসের বাচ্চা পরিচর্যা করার উপায়।
হাঁস পালন করে ৩ মাসের লাখ টাকা আয় করুনরাজশাহী জেলার আজিজ মিয়া সরকারি চাকরি থেকে অবসর পেয়ে বাড়ির পাশে একটি হাঁস পালনের খামার তৈরি করেন। গ্রামের পরিবেশে এক হাজার হাঁসের বাচ্চা নিয়ে সে পালন করতে শুরু করে। তিন মাস পর তার প্রায় লাখ টাকা ইনকাম হয়। এখন সে আরও দুইটি নতুন করে হাঁসের খামার তৈরি করেছে। এই খামারের মাধ্যমে অনেক বেকার যুবক কর্মসংস্থান খুঁজে পেয়েছে। এর মাধ্যমে সে ভালো ইনকাম করতে পারছে এবং অনেকের উপকারও করতে পারছে।
হাঁস কত দিনে ডিম দেয়
হাঁস ৪/৬ মাসের মধ্যে ডিম দেয়। উন্নত জাতের হাঁস হলে সাড়ে চার মাসের মধ্যে ডিম দিয়ে দেয় এবং যদি দেশী হাঁস হয় তাহলে ৬ মাস ডিম দিতে লেগে যায়। প্রথম অবস্থায় ডিমের সাইজগুলো ছোট ছোট হয় আস্তে আস্তে সেগুলো বড় হতে থাকে।
হাঁসের মাংসের উপকারিতাহাঁসের মাংস প্রোটিনের জন্য ভালো একটি উৎস। এতে নিয়াসিন, ফসফরাস, রিবোফ্লোবিন, আয়রন, জিঙ্ক, ভিটামিন বি৬ এবং থিয়ামিন আছে। এছাড়া অল্প পরিমাণে আছে ভিটামিন বি১২ এবং ম্যাগনেসিয়াম। চামড়া সহ হাঁসের মাংসের অধিক মাত্রায় ফ্যাট এবং কোলেস্টেরল ও আছে। এবং হাঁসের মাংস খেলে ওজন বাড়ে।
হাঁসের ডিমের উপকারিতাহাঁসের ডিম একটি স্বাস্থ্যকরী খাবার। হাঁসের ডিমের থাকা ভিটামিন বি১২ হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও হাঁসের ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ রয়েছে, যা দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং রক্ত ও ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। এতে থাকা সেলোনিয়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তার ওপর হাঁসের ডিম রিবোফ্লাভিন সমৃদ্ধ, যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
এছাড়াও হাঁসের ডিম মুরগির ডিমের চেয়ে বেশি প্রোটিন দেয়।
হাঁসের ডিমে রয়েছে জিংক ম্যাগনেসিয়াম ও সেলিনিয়াম যা শরীরের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। ইত্যাদি।
আরো পড়ুনঃ ডিম খেলে কি কি উপকার হয়।
হাঁসের কি কি রোগ হয়
হাঁসের রোগ গুলো কি কি এবং কেন হয় জেনে নিনঃ
1. ডাক ভাইরাল হেপাটাইটিস
এটি একটি মারাত্মক সংক্রমণ রোগ যা Picorna virus ভাইরাস দিয়ে হয়।
2. ডাক প্লেগ
এটি ডাক প্লেগ ভাইরাস দিয়ে হয় । প্রতি বছর অনেক হাঁস এই রোগে মারা যায় মৃত্যুহার ১০০ পর্যন্ত হতে পারে।
3. ডাক কলেরা
এটি পাস্তুরেলা মারটো শীলা নামক ব্যাকটেরিয়া দিয়া হয় ।
4. মাইকোটকোসিস
হাঁস বাইরে খায় বলে অনেক ছত্রাক আক্রান্ত খাবার এবং দূষিত পানি খেয়ে ফেলে, তাই সহজেই এরা আক্রান্ত হয়।
5. আ্মাশয়
হাঁসের বাচ্চা আক্রান্ত হয়, টাইজেরিয়া পারনেসিয়া নামক প্রোটোজোড়া ্নামক প্রোটোজোয়া দিয়ে রোগ হয়।
6. মাইকোপ্লাজমোসিস
তিন সপ্তাহের দিকে বেশি দেখা যায়, পায়ে সমস্যা হয় শ্বাসকষ্ট হয় ।
7. সালমোনেলোসীস
ইদুরের মাধ্যমে ছড়ায়।
হাঁসের রোগের ওষুধ
- ডাক ভাইরাল হেপাটাইটিস রোগের চিকিৎসা্র ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায় না।
- ডাক প্লেগ চিকিৎসা দিলে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায় না তবে স্যালিডিন ডায়াডিন বড় হাসে ০.৫ ml মাংসে তিন দিন ইঞ্জেকশন দিয়ে চেষ্টা করা যায়।
- ডাক কলেরা চিকিৎসায় জেন্টামাইসিন এবং পটেনশিয়াল মাইকোনিড কসুমিকস ভালো কাজ করে।
- আমশা চিকিৎসায় ই এস বি৩ ২-২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে সব সময় পাঁচ দিন
এছাড়াও অনেক ধরনের রোগ আছে এ সমস্ত রোগ থেকে মুক্তি পেতে পরিষ্কার ও সুরক্ষিত স্থানে হাঁস পালন করতে হবে। তাহলে যত ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ আছে সমস্ত রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
হাসের মাংস রান্না করার রেসিপি
হাঁসের মাংস রান্না করার জন্য কি কি উপকরণ লাগে জেনে নিন। ১ কেজি রাজহাঁসের মাংস রান্না করতে কি কি মসলা লাগে দেখে নিনঃ
- রাজহাঁসের মাংস ১ কেজি
- তেল পরিমাণমতো
- পেঁয়াজকুচি আধা কাপ
- পেঁয়াজবাটা ১ কাপ
- রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ
- আদা বাটা ১ টেবিল চামচ
- টমেটো পিউরি ২ কাপ
- হলুদ গুঁড়া ২ চা-চামচ
- মরিচ গুঁড়া ৩ চা-চামচ
- ধনে গুঁড়া ১ চা-চামচ
- জিরা গুঁড়া ১ চা-চামচ
- দারুচিনি ৩ টুকরা
- এলাচ ৩ টুকরা
- তেজপাতা ১টা
- টমেটো কুচি ২ কাপ
- লবণ পরিমাণমতো
- কাঁচা মরিচ ফালি ৪টা
- আস্ত কাঁচা মরিচ ৮টা
- উপরের দিয়া মসলার লিস্ট গুলো মাংসের সাথে ভালোভাবে মিক্স করে চুলায় রেখে দিন। কিছুক্ষণ পর পানি কমে গেলে আবার পানি ঢেলে নেড়ে রেখে দেন। কিছুক্ষণ পর ঢাকনা তুলে দেখুন পানি কমে মাংস সিদ্ধ হলে, তাতে আস্ত কাঁচামরিচ দিয়ে দিন। ঝোল মাখামাখা হলে ফালি করা কাঁচা মরিচ দিয়ে নেড়ে নামিয়ে নিন।
ড্রিম সেন্টার আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url